বৃথা আশা নাকি মরতে মরতে মরে না। পাটচাষিরাও থাকেন আশায়। তবুও প্রতি বছর তাতে জল ঢেলে দেয় পাটের বাজার! প্রতি বারই পাট লাগানোর পরে চাষি ভাবেন, এ বার বুঝি ন্যায্য দাম মিলবে। সুদিন ফিরবে। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হয় না। হতাশ পাটচাষিদের প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে আর কত দিন চাষ করব? মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার কারণেই পাট চাষিদের হাল দিনের পর দিন আরও করুণ হচ্ছে। বছরের পর বছর লাভের আশায় পাট চাষ করেন চাষিরা। কিন্তু বছর শেষে চাষিরা দাম পান না। এ বারেও পাটের দাম ভাল নয়। জেসিআইকে সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনার অনুরোধ জানাব।’’
যদিও জেসিআইএর কর্তাদের দাবি, তাঁরা সহায়ক মূল্যে পাট কিনছেন। সহায়ক মূল্য ও খোলা বাজারে পাটের দাম প্রায় এক হওয়ায় কৃষকরা জেসিআইতে কম আসছেন। তবে চাষি পাট নিয়ে এলেই কেনা হচ্ছে। ডোমকলের কৃষক সাবুল হোসেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘মুখে সহায়ক মূল্যে পাট কেনার কথা বলা হলেও বাস্তবে নানা অজুহাতে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হয় না। কখনও বলা হয়, ‘পাটের মান খারাপ’, কখনও বলা হয়, ‘পাট ভেজা’। এ সব হয়রানির ভয়ে অনেকেই জেসিআইমুখো হন না।’’
ডোমকলের বঘারপুর রমনার বাচ্চু মণ্ডল বলছেন, ‘‘জেসিআইয়ে নিয়ে গেলে কবে পাট বিক্রি হবে তার নিশ্চয়তা নেই। বিক্রি হলেও কবে টাকা পাব তা-ও জানি না। তাই ফড়েদের কাছে নগদ টাকায় বিক্রি করে দিই।’’ হরিহরপাড়ার কৃষক হারুন রশিদের দাবি, ‘‘জেসিআইয়ে পাট নিয়ে গেলে মান কমিয়ে দিয়ে পাটের দাম কম বলছে। ফলে সেখানে পাট নিয়ে গিয়ে ক্ষতি হচ্ছে। তাই ফড়েদের কাছে বিক্রি করছি।’’
নওদার ত্রিমোহিনীর কৃষক সফিউল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আসলে জেসিআই কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনবে না। তাই নানা অজুহাত দেখায়।’’ চাষিরা জানাচ্ছেন, বিঘা প্রতি পাট চাষে খরচ হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর বিঘা প্রতি পাট হয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন কুইন্টাল। সেই পাট বিক্রি করে ১০-১২ হাজার টাকা আসছে। ফলে এ বারেও পাটচাষে ক্ষতি হল!