ইলিশের পোনা। নিজস্ব চিত্র
ইলিশের আনাগোনা এ মরসুমে বাড়লেও ফরাক্কা বাঁধ হওয়ার পর গত চার দশকে ইলিশ প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছিল ফরাক্কা এবং তার লাগোয়া গঙ্গা থেকে। মাঝে মধ্যে কখনও ইলিশ জালে পড়লেও তার দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। ফরাক্কায় গত কয়েক দিনে ইলিশ ফিরতেই তড়িঘড়ি তাই ধুলিয়ান, হাজারপুর, অর্জুনপুর, মহেশপুর লাগোয়া গঙ্গায় ইলিশের খোঁজে ডিঙি নৌকো নিয়ে নেমে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। তবে এই সব ইলিশের প্রায় ৪০ শতাংশই ৫০০ থেকে কিলোখানেক ওজনের।
এখন প্রশ্ন, বাংলাদেশের পদ্মায় ইলিশ ধরা আপাতত বন্ধ থাকায় রুপোলি শস্যের ঝাঁক গঙ্গা-পথ ধরল কেন? নদী গবেষক সূর্য্যেন্দু দে বলছেন, ‘‘বহু চেষ্টাতেও যে নিষেধাজ্ঞা আমরা বাস্তবায়িত করতে পারিনি, বাংলাদেশ তা করে দেখাচ্ছে বছরের পর বছর। বছরে দু’টি সময়, মার্চ থেকে ১ মে এবং মাঝ অক্টোবর থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ— ও দেশের পদ্মায় ইলিশ ধরা বারণ। এই সময় ইলিশ ধরলে সাজা নিশ্চিত। তবে তাঁদের রুজিতে যাতে টান না পড়ে সে জন্য ৪০ কেজি করে চাল দেয় সে দেশের সরকার। যার নিট ফল, উৎপাদন বেড়েছে। অথচ দেখুন পদ্মার ইলিশ এই বে-মরসুমে বাধা না পেয়ে যখন গঙ্গায় প্রবেশ করল, আমাদের দেশের মৎস্যজীবীরা তাদের ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরতে শুরু করলেন। ফলে ছোট অবস্থাতেই অকালে ফুরিয়ে গেল ইলিশের বাড়বাড়ন্তের সুযোগ।’’
মৎস্য দফতরের নিয়ম কিন্তু বলছে, এদেশের নদীতেও ইলিশ ধরায় মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো কঠোর ভাবে তার নজরদারি নেই। হাতেনাতে তার ফলও মিলছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ইলিশ ধরা পড়েছিল ৫.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন। এ বছর বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫ লক্ষ মেট্রিক টন। আর পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গায় বছরে ইলিশের উৎপাদন ৪০ হাজার টনের মধ্যেই থমকে রয়েছে। আর এ রাজ্যে মৎস্য দফতর থাকলেও প্রজনন মরসুমে মাছ ধরা আটকাতে সামান্যতম নজরদারি নেই, নেই পরিকল্পনা। মৎস্য দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা কর্তাদের কথায় স্পষ্ট, পদ্মা উজিয়ে গঙ্গায় যে ইলিশ ঢুকছে তাতেই সন্তুষ্ট তাঁরা।
গত কদিনে ফরাক্কায় ধরা পড়া অন্তত ৬০ শতাংশ ইলিশেরই ওজন ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রামের মধ্যে। এগুলি ধরা যে বেআইনি তা জানেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। কিন্তু নজরদারি না থাকায় তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তাঁদের। ফরাক্কার বেনিয়াগ্রামের এক মৎস্যজীবী রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘এত মাছ কখনও পাই না গঙ্গায়। নিয়মের তোয়াক্কা না করে তাই যা পারছি ধরছি।’’