জন্মের পরেই মানসিক ভারসাম্যহীন মা তাকে ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পরম মমতায় সদ্যজাতকে কোলে তুলে নিয়েছিল নাকাশিপাড়া তেঘড়িয়ার এক মহিলা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তার কাছ থেকে শিশুটিকে নিয়ে ভর্তি করে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতালে।
এই ধরণের শিশুদের জন্য নদিয়ায় কোনও ‘স্পেশাল অ্যাডপশন এজেন্সি’ (এসএসএ) বা ‘সা’নেই। সা থাকলে সেখানেই ঠাঁই মিলত সদ্যজাত শিশুটির। নানান টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্তশিশুটিকে পড়শি জেলা বর্ধমানের ‘সা’ পাটানো হয়।
কয়েকমাস আগে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল মানসিক ভারসাম্যহীন এক অন্তসত্ত্বা মহিলাকে। সন্তান প্রসবের পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বহরমপুরের মানসিক হাসপাতালে। আর নিরুপায় হয়ে সদ্যাজাত শিশুটিকে রেখে আসা হয় হাওড়া জেলার ‘সা’ তে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে নদিয়া জেলার প্রায় ৩০টি অনাথ শিশু রাখা আছে হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমানের ‘সা’তে। আগে জেলার অনাথ শিশুদের বারাসতের সা-তে পাঠানো হয়। সেই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার পর থেকেই সমস্যা আরও জটিল হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি জেলাতেই একটি ‘সা’ থাকার কথা। সদ্যজাত থেকে ছ’বছরের শিশুদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভাবে রাখা হয়। কেউ শিশু দত্তক নিলে আইন মেনে সেখান থেকেই নেন। কিন্তু নদিয়া জেলায় কোনও ‘সা’ নেই। চাইল্ড লাইন থেকে শুরু করে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিও একাধিকবার বিষয়টি জানিয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
চাইল্ড লাইন কর্তৃপক্ষের কথায়, অন্য জেলায় শিশুদের নিয়ে যাওয়াটা ঝুঁকির। শুধু তাই নয়, এত দূর থেকে অন্য জেলায় থাকা শিশুদের নিয়মিত খোঁজ রাখাও শক্ত। চাইল্ড লাইনের ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর পারমিতা দত্ত বলেন, “জেলায় ‘সা’ না থাকাটা একটা বড় সমস্যা। আমরা সেটা প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েছি।” শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনাথ শিশুদের দিনের পর দিন হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। সা-তে এই ধরনের শিশুদের রাখার যথার্থ পরিকাঠামো রয়েছে। হাসপাতালে সেভাবে শিশুদের দেখভাল সম্ভব নয়।”
জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান রিনা মুখোপাধ্যায় বলছেন, “প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব সেটা করে ফেলতে হবে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাটের লায়ন্স ক্লাব-এফ (ওয়েস্ট) সা তৈরির জন্য আবেদন করেছিল। সেই আবেদন অনুমোদনও করেছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু আচমকা ওই সংস্থা পিছু হঠতে শুরু করায় বিষয়টি বিশবাঁও জলে চলে গিয়েছে। সংস্থার সভাপতি প্রবীর সাহা বলেন, “সা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সদস্যরা কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।’’ জেলা শাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘সমস্যা মেটাতে আমরা আবারও বসব রানাঘাটের বেসরকারি সংস্থা সঙ্গে। দ্রুত সা চালু হবে।’’