স্মরণ-মিছিলে। নিজস্ব চিত্র
পুলিশের হাতে সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। অথচ গোটা একটা দিন পেরিয়ে গেলেও কৃষ্ণনগরে চিকিৎসকের বাড়িতে ঢোকার মুখে তাঁর ছায়াসঙ্গী গুলি করে খুনের রহস্যের কিনারা হল না। চিকিৎসকের দুই ছেলে, গাড়ির চালক এবং এক ওষুধের দালালকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বড় ধন্দ তৈরি হয়েছে তা হল শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাসের বয়ান ও তাঁর সঙ্গী কার্তিক বিশ্বাসের শরীরে গুলি লাগার জায়গার মধ্যে অসঙ্গতি। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী, আততায়ী পিছন দিক থেকে পরপর গুলি ছুড়েছিল। অথচ কার্তিকের পিঠের বদলে বুকে ও মুখে গুলি লেগেছে। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, তবে কি বাড়ির মধ্যে থেকে কেউ গুলি ছুড়েছিল? রাত পর্যন্ত সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে রাউন্ড দিয়ে গাড়িতে কৃষ্ণনগরের চুনুরিপাড়া লেনের বাড়িতে ফেরেন কুমুদরঞ্জন। রোজকার মতোই সঙ্গে ছিলেন কার্তিক। গাড়ি ছেড়ে বাড়িতে ঢোকার আগেই তাঁকে পরপর গুলি করা হয়। আততায়ীকে ধরার দাবিতে এ দিন সন্ধ্যায় কৃষ্ণনগর শহরে মোমবাতি মিছিল বার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, হাসপাতালের ভিতরকার কোনও গন্ডগোল বা প্রেসক্রিপশনে নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধ লিখে মোটা টাকা কমিশন নেওয়ার যে চক্র, তার জেরে এই খুন হয়ে থাকতে পারে।
তদন্তকারীদের একাংশের ধারণা, প্রথম গুলি চলার পরেই কার্তিক বুঝে যান যে তিনিই রয়েছেন নিশানায়। আততায়ীকে তিনি চিনতে পেরেও থাকতে পারেন। সিসিটিভি-র ফুটেজ থেকেও এমন ইঙ্গিত মিলছে বলে তাঁদের দাবি। ওষুধের দালাল কার্তিক বহু দিন ধরেই কুমুদরঞ্জনের বিশেষ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। চিকিৎসকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সম্পত্তির হিসাব অনেকটাই তাঁর কাছে থাকত। কুমুদরঞ্জনের ছেলেদের তা পছন্দ ছিল না বলে পুলিশ জেনেছে। আবার হাসপাতাল ও চেম্বারে লেখা ওষুধের কমিশন নিয়ে অন্য এক দালালের সঙ্গে কার্তিকের সংঘাতও চলছিল।
জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, সিসিটিভি-র ফুটেজে দেখা যাচ্ছে: বাড়িতে ঢোকার সময়ে পিছন থেকে প্রথমে গুলি চালায় হেলমেট পরা আততায়ী। সেই গুলি লাগেনি। পিছু ফিরে লোকটিকে দেখেই দৌড়তে শুরু করেন কার্তিক। কিন্তু ডাক্তার নন, তিনিই যে লক্ষ্য, তাতে কি তিনি নিশ্চিত ভাবে বুঝে গিয়েছিলেন? তাই কুমুদরঞ্জনকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে নিজে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা করছিলেন?
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এমন সন্দেহও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে কুমুদরঞ্জন আততায়ীকে চিনতে পেরেছিলেন। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ওঁকে ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে হয়তো কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত। কিন্তু তিনি নিজে অসুস্থ, তাই আমরা বেশি কিছু করতে পারছি না।” রাতে পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘সিসিটিভি-র ফুটেজ পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু তাতে সবটা স্পষ্ট হচ্ছে না। আমরা অপরাধীকে চিহ্নিত করে ধরার চেষ্টা করছি।’’