কেউ কি জানে তহির কোথায়!

বুধবার, সাহেবনগরে গুলি-কাণ্ডের পর আন্দোলন থিতিয়ে এলেও তৃণমূলের প্রতি পাঁচ গাঁয়ের মানুষের আস্থা যে টলোমলো তা নেতারা বুঝছেন।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

 জলঙ্গি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:৫১
Share:

তহিরুদ্দিন মণ্ডল।—ছবি সংগৃহীত।

তহিরুদ্দিন মণ্ডল কোথায়?

Advertisement

প্রশ্নটা জলঙ্গির পথে-ঘাটে, মিছিল থেকে দেওয়াল সকলের, শুধু উত্তর নেই। উত্তর যাদের কাছে থাকার কথা, তাদের কাছে রয়েছে গালভরা প্রতিশ্রুতি। মুখে কুলুপ আঁটা শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের চোখেমুখে উদ্বেগ, গ্রামের ছাপোষা মানুষ থেকে বিরোধী নেতাদের হুঙ্কারের সামনে তাঁদের ‘ছেড়ে দে মা’ গোছের অস্বস্তি।

বুধবার, সাহেবনগরে গুলি-কাণ্ডের পর আন্দোলন থিতিয়ে এলেও তৃণমূলের প্রতি পাঁচ গাঁয়ের মানুষের আস্থা যে টলোমলো তা নেতারা বুঝছেন। আড়ালে আস্ফালন ঝেড়ে দলের এক নেতা তাই বলে ফেলছেন, ‘‘দল বুঝছে না, একটা ব্লক সভাপতি হারালে ফের পাওয়া যাবে। কিন্তু মানুষের মন গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।’’

Advertisement

হয়ত সে কথা বুঝেই দলের জেলা মুখপাত্র অশোক দাস বলছেন, ‘‘তহিরুদ্দিনকে গ্রেফতার করতেই হবে। তা নিয়ে কোনও সন্দেহ-সংশয় নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল কখনও অন্যায়কারীর পাশে দাঁড়ায়নি এ ক্ষেত্রেও দাঁড়াবে না।’’ কিন্তু, দল পাশে না থাকলে সামান্য এক ব্লক সবাপতির খোঁজে এত হয়রান কেন পুলিশ! প্রশ্নটা নিত্য লব্জের মতো রাখছেন বিরোধী নেতারা। কিন্তু পুলিশ সে বক্রোক্তি গায়ে মাখলে তো!

বাম জমানায়, এক সিপিএম নেতার মোটারবাইক চালিয়ে যার উত্থান, পালাবদলের পরে দলের রং বদলে যে তৃণমূলে বিড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এলাকায় দিনের পর দিন জুমুমবাজি এবং ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় গুলি-বোমার ভয় দেখিয়ে হারানো জমির খোঁজ করা এক নেতার পাসে দল দাঁড়াচ্ছে কেন?

এক কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘দিদির দল যদি অন্যায়কারীর পাশে না-ই দাঁড়ায় তা হলে এ ক্ষেত্রে অন্যথা হল কেন?’’ উত্তরটা বাম-কংগ্রেস উভয় তরফেই মিলছে—সীমান্ত এলাকা থেকে নানাবিধ ‘সুবিধা’ নেতাদের কাছে নিয়মিত ভেট পাঠায় তহির। তাকে তোয়াজ না করে উপায় আছে?

জেলা জুড়ে কান তিনেক বাড়ি, জমি, মদের দোকান, ঠিকাদার ব্যবসা— পালাবদলের পরে নিজের আখের কম গোছায়নি তহির।

সাহেবনগর এলাকার একদা প্রতাপশালী এক বাম নেতা বলছেন, ‘‘পাচারের কারবারে তহিরুদিদেনর অর্থবল তো কম নয়। সেই বলে দল এবং আইনের রক্ষকদেরও রশেবসে রাখে সে। বিনিময়ে ক্ষমতার উত্তাপ ভোগ করে সে।এর বেশি আর কী চায় মানুষ!’’ জলঙ্গির এক তৃণমূল নেতাও বলছেন, ‘‘ক্ষমতা পেয়ে তহির কেবল বিরোধীদের নয়, নিজের দলের অনেক নেতাকেও অপমান করতে ছাড়েনি। কিছু দিন আগে সাগরপাড়া বাজারে তৃণমূলের যুব সংগঠনের কার্যালয় ভেঙে সে বলে গিয়েছিল, ‘আমার বিরোধীতা করলে সব গুঁড়িয়ে দেব!’’

জলঙ্গি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা তাই বলছেন, ‘‘এর পরেও তহিরকে তৃণমূলের সম্পদ বলবেন না? আর সেই সম্পদকে ধরতে তৃণমূল নেতাদের ইশারা যে প্রয়োজন পুলিশ তা জানে!’’ সাহেবনগরের আসাদুল্লা আলি তাই বলছে, ‘‘জানে বলেই বুঝি গ্রামের মানুষকে পুলিশ তাই নিছক আশ্বাসের উপরে রাখছে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement