দুয়ারে সরকার। প্রতীকী চিত্র।
দুয়ারে সরকারের পঞ্চম পর্বে যে তিনটি নতুন সংযোজন হয়েছে, তার অন্যতম পাট্টার জন্য আবেদন। কিন্তু ঘটনাচক্রে দিন দশেক পেরিয়ে গেলেও গোটা রানাঘাট মহকুমায় দুয়ারে সরকার শিবিরে একটিও পাট্টার আবেদন জমা পড়েনি।
রানাঘাট মহকুমার একটা বড় অংশ উদ্বাস্তু অধ্যুষিত বলে পরিচিত। সেখানে জমির পাট্টা পাওয়া বহু মানুষের আগ্রহের বিষয়, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যখন বারবার নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বলবৎ করার কথা বলছেন। উদ্বাস্তু ও মতুয়া অধ্যুষিত দক্ষিণ নদিয়ায় গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র ও আটটির মধ্যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র চলে গিয়েছে বিজেপির হাতে। ফলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মানুষের মন ফিরে পেতে মরিয়া তৃণমূল। উদ্বাস্তু এলাকায় পাট্টাদান তার একটা উপায় হতে পারে বলে দলের নেতৃত্ব মনে করছেন। কিন্তু বাস্তবে দুয়ারে সরকার শিবিরে পাট্টার আবেদন জমা দিতে বিশেষ কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ইতিহাস বলছে, ১৯৪৬ সালে নোয়াখালির দাঙ্গার পর থেকেই পূর্ববঙ্গের মানুষজন এ দেশে আসতে শুরু করেছিলেন। দেশভাগের সময়ে কাতারে কাতারে মানুষ এসেছেন, তার পরেও এসেছেন। তাঁদের বসবাসের জন্য বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনি তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারি এবং জবরদখল কলোনি ররেছে। এক সময় নদিয়া জেলা জুড়ে ২৭৫টি সরকারি এবং জবরদখল কলোনি তৈরি হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে সেই সব কলোনিতে জমির পাট্টা বা মালিকানা দেওয়া শুরু করে। প্রথম দিকে কেন্দ্র শর্তসাপেক্ষ জমির দলিল দিলে বামেরা তা মানতে চায়নি। পরে কেন্দ্র নিঃশর্তে দলিল দিতে রাজি হয়। ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার আসার পরেও পাট্টা দেওয়ার কাজ চলেছে।
উদ্বাস্তু সংগঠন সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের হিসাবে, ইতিমধ্যে সরকারি কলোনিগুলিতে শতকরা ৮৫-৯০ ভাগ উদ্বাস্তু পরিবারে পাট্টা পেয়ে গিয়েছে। সে দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে জবরদখল কলোনিগুলো। সেখানে ৫০-৬০ শতাংশ ভাগ পরিবারকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। রানাঘাট মহকুমা উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর সূত্রে জানা যায়, তাদের অধীনে মোট ৫২টি উদ্বাস্তু কলোনি রয়েছে। তৃণমূলের জমানায় চলতি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৩৯২৬ জনকে নিঃশর্ত জমির দলিল দেওয়া হয়েছে। ওই দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুজয় সর্দার বলেন, “সারা বছর আমাদের কাছে বহু আবেদন জমা পড়ে। সেই আবেদন খতিয়ে দেখে আমরা জমির দলিল দিচ্ছি।”
গত ১ নভেম্বর থেকে নতুন করে ফের দুয়ারে সরকার শিবির শুরু হয়েছে। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের একাধিক সূত্রের দাবি, এমনিতে সারা বছরই পাট্টার জন্য আবেদন করা চলে, দুয়ারে সরকার শিবিরে যাওয়ার খুব একটা অর্থ নেই। হয়তো সেই কারণেই ওই সব শিবিরে পাট্টার আবেদন জমা পড়ছে না। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “এখনও কিছু মানুষ পাট্টা পাননি। সরকারের সঙ্গে তাঁদের সমন্বয় ঘটাতেই দুয়ারে সরকার শিবিরে বিষয়টিকে যুক্ত করা হয়েছে।” আবার বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “দুয়ারে সরকার শিবিরে অর্থের বিনিময়ে পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। তাই সেখানে আবেদন জমা হচ্ছে না।”
আর, সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের রাজ্য উপদেষ্ট কমিটির সদস্য তথা সিপিএম নেতা অশোক চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “পাট্টা দেওয়ার আসল কাজ হয়েছিল বামফ্রন্টের সময়ে। তৃণমূল উদ্বাস্তু দফতরটাই তুলে দিয়ে ভূমি সংস্কারের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। এতেই বোঝা যায়, এরা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে কতটা মানবিক।”