কৃষ্ণগঞ্জে টিঁঁকে সেই নিত্যই

সিপিএম প্রার্থী ঘোষণা করার পরে কৃষ্ণগঞ্জে কংগ্রেসের গৃহযুদ্ধ স্তিমিত হওয়া দূরে থাক, আরও উসকে উঠল। দলের কর্মীদের একাংশের আপত্তি আগ্রাহ্য করে মনোনয়ন জমা দিলেন নিত্যগোপাল মণ্ডল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

সিপিএম প্রার্থী ঘোষণা করার পরে কৃষ্ণগঞ্জে কংগ্রেসের গৃহযুদ্ধ স্তিমিত হওয়া দূরে থাক, আরও উসকে উঠল। দলের কর্মীদের একাংশের আপত্তি আগ্রাহ্য করে মনোনয়ন জমা দিলেন নিত্যগোপাল মণ্ডল।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে নিজের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ‌নিয়ে রানাঘাটে গিয়ে মনোনয়ন পেশ করেন নিত্য। তাঁর দাবি, প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশই পালন করেছেন তিনি। যদিও আগের রাতেই সিপিএমের ঘোষিত প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে মিছিল করে ফেলেছেন হাঁসখালির কংগ্রেস নেতাকর্মীদের একাংশ। এ দিনও বাদকুল্লায় তাঁকে নিয়ে মিছিল করেন কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, সিপিএমের প্রার্থী ঘোষণার কথা বৃহস্পতিবার রাতেই পৌঁছে গিয়েছিল প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর কাছে। তাঁর সঙ্গে ফোনে কথাও হয় নিত্যর। অধীর তাঁকে শুক্রবারই মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরে আর সময় নষ্ট করেননি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তথা ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নিত্যগোপাল।

Advertisement

এ দিন মনোনয়ন জমার পরে নিত্যগোপাল দাবি করেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতি জানিয়েছেন, আমিই দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরেও ফের তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, সিপিএম কী করছে তা দেখার দরকার নেই। আমি যেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তিনি আমার সঙ্গে আছেন।’’ একই কথা জানান কংগ্রেসের নদিয়া জেলা সভাপতি, অধীর-ঘনিষ্ঠ অসীম সাহাও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রদেশ সভাপতির নির্দেশেই নিত্যগোপাল মণ্ডল মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আমাদের নেতা-কর্মীরা সমস্ত মান-অভিমান ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি।’’

অসীমবাবুরা মুখে যা-ই বলুন, এই কেন্দ্রে প্রার্থী নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে আড়াআড়ি বিভাজন হয়ে গিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। তার যথেষ্ট কারণও আছে।

গত বছর উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস ও সিপিএম এতটাই খারাপ ফল করেছিল যে আসন ভাগাভাগির সময়ে তাদের কেউই কৃষ্ণগ‌ঞ্জ ভাগে নিতে রাজি হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত গত ২২ মার্চ কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব হাঁসখালির দক্ষিণপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিশ্বনাথ বিশ্বাসের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি সিপিএম এবং দলের কর্মীদের নিয়ে প্রচারও শুরু করে দেন। কিন্তু সাত দিনের মাথায় প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁর পরিবর্তে চাকদহের বাসিন্দা, আর এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রতাপ রায়ের নাম ঘোষণা করায় কর্মীদের বড় অংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। চাপে পড়ে নিজেই সরে দাঁড়ান প্রতাপ। এর পরেই নিত্যগোপাল মণ্ডলের নাম ঘোষণা করা হয়।

গত উপনির্বাচনে এই কেন্দ্রে দাঁড়িয়েই নিত্যগোপালের জামানত জব্দ হয়েছিল। তাঁকেই ফের প্রার্থী করা হচ্ছে শুনে বিশেষ করে হাঁসখালি ব্লকের নেতাকর্মীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেন। বরং বিশ্বনাথবাবুকেই প্রার্থিপদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে শুরু করেন তাঁরা। পাশাপাশি, সিপিএমের সঙ্গেও কথাবার্তা চালিয়ে যেতে থাকেন। শেষে তাঁদেরই উপস্থিতিতে ‘জোটধর্ম’ ছেড়ে বগুলা লোকাল সম্পাদক তথা ডিওয়াইএফ-এর জেলা সভাপতি মৃণাল বিশ্বাসকে কৃষ্ণগঞ্জে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। কংগ্রেসের আগের দুই প্রার্থী জানিয়ে দেন, এর পরে দল নিত্যকে তুলে নিলে সিপিএমের হয়ে প্রচারে বেরোতেও তাঁরা রাজি আছেন।

সিপিএমের সঙ্গে বৈঠকে হাজির ছিলেন কংগ্রেসের হাঁসখালি ব্লক সভাপতি দিনেশ চক্রবর্তী। রাতে তাঁরা মৃণালকে নিয়ে প্রচারেও বেরোন। এ দিন অবশ্য জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দল‌ের হয়ে প্রচারে না গিয়ে সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে প্রচার করবেন, তাঁদের সাসপেন্ড করা হতে পারে। যা শুনে দিনেশবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সাসপেন্ড করলে, করবে। আমি কারও চাকরি করি না। হাঁসখালির কর্মীরা তৃণমূলকে হারাতে চান, তাদের আসনটা উপহার দিতে নয়। এটাই সাধারণ কর্মীদের মনের কথা। যিনি তৃণমলকে হারাতে পারবেন, তাঁর হয়েই লড়াই করব।’’

এ দিনই নিজের এলাকায় সিপিএম প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে বেরিয়েছিলেন কংগ্রেসের বাদকুল্লা-১ অঞ্চল সভাপতি অরুণ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সাসপেন্ড করবে না কি আমরাই ইস্তফা দেব, সেটা পরের বিষয়। কিন্তু কোনও কারণেই আমরা আসনটা তৃণমূলকে উপহার দিতে রাজি নই। তার জন্য যা করার দরকার, সেটাই করব।’’

কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে অবশ্য উল্টো সুরও শোনা যাচ্ছে। সেখানে নেতাকর্মীদের নিত্যকে নিয়ে বিশেষ আপত্তি নেই। কংগ্রেসের কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি শঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘আমরা দলের প্রার্থীর হয়েই প্রচার করব। আমাদের কাছে দলই শেষ কথা।’’ তাঁর দাবি, ‘‘নিজেদের প্রার্থী টিকিট না পাওয়ার কারণেই হাঁসখালির দিনেশদারা এমনটা করছেন। আশা করি, ওঁদের প্ররোচনায় সিপিএম পা দেবে না। বরং জোটধর্ম মেনে আমাদের প্রার্থীর হয়েই প্রচার করবে।’’

তার সম্ভাবনা কতটা?

এ দিনই মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য কাগজপত্র তৈরি করে ফেলেছেন মৃণাল। কংগ্রেস এবং দলের কর্মীদের সঙ্গে প্রচারও করেছেন। সিপিএমের হাঁসখালি জোনাল সম্পাদক মহাদেব মণ্ডল তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রার্থী নিয়ে কংগ্রেস দোলাচলে। এই অবস্থায় আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসনটা তৃণমূলকে ছেড়ে দিতে পারি না। তাই দলের নির্দেশেই কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তৃণমূলকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নই।’’

অঙ্ক বলছে, কৃষ্ণগঞ্জে তৃণমূলকে সামান্যতম চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে হলেও সার্বিক জোট প্রয়োজন। তা হতে গেলে কংগ্রেস বা সিপিএম, যে কোনও এক পক্ষকে প্রার্থী তুলে নিতে হবে। কে আগে চোখের পলক ফেলে, আদৌ ফেলে কি না, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement