ফাইল চিত্র।
দিনটা ছিল ৩০ এপ্রিল, শনিবার। ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ৩টে ৩০ মিনিট। সুদূর রোমের সঙ্গে এক অদৃশ্য সুতোয় জুড়ে গেল কৃষ্ণনগর। বিশ্বের তাবৎ খ্রিস্টভক্তের প্রধান ধর্মীয় আধ্যাত্ম কেন্দ্র ভ্যাটিক্যান সিটি থেকে পোপ ফ্রান্সিস ঘোষণা করেন কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল তথা নতুন বিশপ হলেন নির্মল ভিনসেন্ট গোমস। পূর্বতন বিশপ যোশেফ সুরেন গোমসের স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশ বা ডায়োসেসের তিনি হলেন অষ্টম বিশপ।
পরবর্তী প্রায় তিন মাসের প্রস্তুতি এবং অপেক্ষা শেষে শনিবার ২৩ জুলাই সাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ধর্মপাল বা বিশপ হিসাবে অভিষেক হল নির্মল ভিনসেন্ট গোমসের। এর আগে বয়সের কারণে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে অবসর নিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর ডায়োসেসের সপ্তম বিশপ জোসেফ সুরেন গোমস। তিনি ২০০২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কৃষ্ণনগর ডায়োসেসের অধীন ২১টি প্যারিসের প্রায় দেড়শোটি ছোটবড় চার্চের প্রধান এবং কমবেশি পঁয়ষট্টি হাজার খ্রিস্টভক্তের ধর্মপিতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মধ্যবর্তী সময়ে পোপের নির্দেশে কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশের অস্থায়ী ধর্মপালের দায়িত্ব তদারকি করেন কলকাতার আর্চ বিশপ টমাস ডিসুজা।
১৮৮৬ সালে কৃষ্ণনগর চার্চটি একটি ডায়োসেস বা ধর্মপ্রদেশে পরিণত হয়। পরবর্তী প্রায় সোয়া শো বছর ধরে এই চার্চ স্বক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যটন দফতর রাজ্যের যে সাতটি প্রাচীন গির্জাকে বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন পর্যটন কেন্দ্র বলে ঘোষণা করেছে, এটি তারমধ্যে অন্যতম।
চার্চের তরফে সমীর স্টিফেন লাহিড়ি জানান “নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ এই দু’টি জেলাকে নিয়ে গঠিত কৃষ্ণনগর ধর্মপ্রদেশ। যার অন্তর্গত খ্রিস্ট ভক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। মোট ধর্মপল্লির সংখ্যা ১৯টি। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ১৬টি এবং ৩২টি শিক্ষায়তন আছে।’’ জানা গিয়েছে নব নিযুক্ত বিশপ নির্মল ভিনসেন্ট গোমসের জন্ম রানাঘাটে। তিনি বহুভাষাবিদ। পুরোহিত হওয়ার বাসনায় সালেসিয় ধর্মসঙ্ঘে যোগদান করেন। দশ বছর তিনি রোমে থেকে বিভিন্ন শাস্ত্র অধ্যয়নের পাশাপাশি ইতালিয়, জার্মান, গ্রিক, আরামিক, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, ইংরেজি এবং নেপালি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন।
নতুন বিশপ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বিষয়টি আমার কাছে কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এত বড় দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করায় আমি গর্বিত এবং কৃতজ্ঞ। খ্রিস্টধর্মের পাশাপাশি আমার বিশেষ গুরুত্ব থাকবে শিক্ষার প্রসার এবং বিস্তার ঘটানোর প্রতি।”