চালকদের অবরোধে যানজটে নাজেহাল জাতীয় সড়ক

রেলের মাল কার লরিতে, চলছে বিবাদ

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কৃষ্ণনগরের পালপাড়ায় অবরোধ শুরু হয়। চলে প্রায় এক ঘণ্টা। কোতোয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে এই ঘটনার সঙ্গে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের নামও জড়িয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৪
Share:

রুদ্ধ: লরি চালকদের অবরোধের জেরে বন্ধ যান চলাচল। কৃষ্ণনগরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দুটো সংগঠন ভেঙে তিন হয়েছে। এ বার কোন সংগঠনের লরি রেলের রেক থেকে মাল বহন করবে তা নিয়ে গন্ডগোলের জেরে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ হয়ে রইল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। হয়রানির শিকার হলেন দূরপাল্লার গাড়ির যাত্রীরা।

Advertisement

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কৃষ্ণনগরের পালপাড়ায় অবরোধ শুরু হয়। চলে প্রায় এক ঘণ্টা। কোতোয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে এই ঘটনার সঙ্গে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের নামও জড়িয়ে গিয়েছে। এ দিন সাময়িক ভাবে সমস্যা মিটলেও ভিতরে জট রয়েই গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোন পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে রাজি নয়।

কৃষ্ণনগর শহরের লরি মালিকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রেলের রেক। ওয়াগনে আসা সামগ্রী তাঁরা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেন। একটা রেক ঢুকলে তার মাল খালাস করতে অন্তত আড়াইশো লরি প্রয়োজন হয়। কোন সংগঠনের কতগুলি লরি ব্যবহার করা হবে, তা নিয়েই বেধেছে বিবাদ।

Advertisement

নদিয়ায় প্রথমে লরি মালিকদের একটাই সংগঠন ছিল— কৃষ্ণনগর লরি মালিক সমিতি। ১৯৯৮ সালে তা ভেঙে নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হয়। বর্তমানে তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী। মূলত তারাই স্টেশন এলাকা বা রেক নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু দুটো সংগঠনের মধ্যে সংঘাত ছিল না। নিজেদের মধ্যে কথা বলে তারা লরি ভাগাভাগি করত। কিন্তু সম্প্রতি কৃষ্ণনগর লরি মালিক সমিতি ভেঙে ভাতজাংলা লরি মালিক সমিতি তৈরি হয়েছে। আর তার পরেই শুরু হয়েছে গন্ডগোল। আগের দুটো সমিতি ঠিক করেছে, অন্য কোনও সংগঠনকে তারা ঢুকতে দেবে না।

গত ১ জানুয়ারি প্রথম ভাতজাংলা লরি মালিক সমিতির লোকজন এসে রেকের মাল বহনের জন্য নিজেদের সদস্যদের মধ্যে সংগঠনের ‘টোকেন’ বিলি করতে থাকেন। তাঁদের বাধা দেন ডিস্ট্রক্ট ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা। ফিরে গিয়ে তাঁরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে গুদামে মাল খালাস করা বন্ধ করে দেন। পরে মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের হস্তক্ষেপে লরি থেকে মাল খালাস শুরু হলেও গন্ডগোল থেকেই যায়। পরের দিন সমস্ত পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। কিন্তু দু’পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে যায়।

বুধবার আবার রেকের মাল বহন করার জন্য আসেন ভাতজাংলা লরি মালিক সমিতির সদস্যেরা। তাঁরা নিজেদের সংগঠনের কুপন বিলি করা শুরু করতেই ফের বাধা আসে। ফিরে গিয়ে দুর্গাপুরের সারের গুদামে মাল খালাস করা বন্ধ করে দেন তাঁরা। ফলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে লরির লাইন পড়ে যায়। শুরু হয় যানজট। এরই মধ্যে ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চালকেরা সার নামাতে দেওয়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন।

ভাতজাংলা লরি মালিক সমিতির সম্পাদক আলি হোসেন মণ্ডল নিজে কৃষ্ণনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য এবং মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁর দাবি, “ওরা এত দিন সবটা নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমাদের সে ভাবে মাল বহনের সুযোগ দিত না। ওরা বলছে, আমাদের স্টেশনে ঢুকতে দেবে না। তা হলে আমাদের এলাকায় ১৪টি গুদামেও ওদের ঢুকতে দেব না।”

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জগদীশ ঘোষ বলেন, “আমরা সবাই আলোচনা করে কাজ বণ্টন করে এসেছি এত কাল। ওদের বলেছিলাম আমাদের সংগঠনের সদস্য হতে। ওরা তা না হয়ে অন্য সংগঠন তৈরি করে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছে।” মন্ত্রী বলে‌ন, “বলেছিলাম, আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। আবার কী হল, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement