র্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফাইল চিত্র।
একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়াচ্ছে জরুরি বিভাগের সামনে। সেখান থেকে যাঁদের নামানো হচ্ছে তাঁদের কারও মাথা ফাটা, কারও হাত কাটা, কারও গোটা শরীর রক্তাক্ত, কেউ বা গুলিবিদ্ধ, কারও হাত বা পায়ের হাড় ভাঙা। সকলেই ভোট-হিংসার শিকার।
শনিবার দিনভর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের চিত্রটাই এমনই ছিল। রবিবারও একই ধরনের রোগী এলেও সংখ্যা ছিল অনেকেটাই কম। কিন্তু জখমদের তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে। কারণ নির্বাচন ও তার পরের দিন— এই দুদিনেই সাধারণ রোগীর পাশাপাশি ভোট হিংসায় জখম অন্তত ১৫০ জন ভর্তি হয়েছেন। শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোট হিংসায় জখম ১২৫ জন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। রবিবারও অন্ততপক্ষে ২৫ জন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় মেঝেয় রোগীদের রাখতে হয়েছে।
সূত্রের খবর, ভোটের দিন থেকে ভোটের ফল বেরনোর পরে আরও দু’দিন পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও আধিকারিকদের বহরমপুর ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে। সেই মতো ভোটের দিন থেকে দিনরাত এক করে চিকিৎসক থেকে নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সহ অন্য কর্মীরা কাজ করে চলেছেন। অনেক জখম রোগীকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসতে দেখে অন্য রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তাঁদের কথায়, কেন ভোটের জন্য এত খুন, রক্তপাত হবে?
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, ‘‘শনিবার দিনভর ১২৫ জনের উপরে ভোট হিংসায় জখম রোগী এসেছেন। তবে রবিবার সেই সংখ্যা খুবই কম ছিল। রবিবার জখমদের অনেকেই ছুটি নিয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলের দিন থেকে আরও দু’দিন পর্যন্ত আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’’
শনিবার সকাল থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে বাড়তে থাকে জখম রোগীর সংখ্যাও। জেলার এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে অ্যাম্বুল্যান্স ছুটে এসেছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এমনিতেই এই হাসপাতালে রোগীর চাপের কারণে একই শয্যায় দুজন করে রাখতে হয়। তার উপরে দেড়শো জন অতিরিক্ত রোগী চলে আসায় ১০টি নতুন শয্যা করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের মেঝেতে ম্যাট্রেস পেতে রোগী রেখে সামাল দিতে হয়েছে।