—প্রতীকী চিত্র।
জেলার সংস্কৃতি চর্চা ও তার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রামতুন লাহিড়ী, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বিষ্ণু চক্রবর্তীর মতো প্রতিভাবান সব নাম। অথচ তাঁদের সেই অবদানের কথা বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা। ওই সব মানুষের অবদান নদিয়ার সংস্কৃতিকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছে তা এক কথায় 'নান্দনিক'। বাংলার মানুষের কাছে জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে এক ছাতার নীচে এনে তুলে ধরতে তিন দিনের নান্দনিক নদিয়া ভাষা উৎসব ও মেলার উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে 'নান্দনিক নদিয়া' নামে একদিনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল জেলা সদর কৃষ্ণনগরে। সেখানে ভাল কাজের নিরিখে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী, বেশ কয়েকটি গ্রামকে পুরস্কৃত করা হয়। তারপরেই জেলা প্রশাসনের তরফে চিন্তা-ভাবনা করা হয়, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মেলা, বীরভূমের পৌষ মেলা, জয়দেবের মেলা, কোচবিহারের রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলার মতোই নদিয়ার নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতির ভাবধারাকে ফুটিয়ে তুলতে নান্দনিক নদিয়া ভাষা উৎসব ও মেলার আয়োজনোর বিষয়ে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনুপকুমার দত্ত বলেন, "বর্তমানে বাংলার স্ট্যান্ডার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে যা ধরা হয়, তার সঙ্গে নদিয়া তথা নবদ্বীপের বাংলা ভাষার মিল রয়েছে বহু আগে থেকেই। অথচ বর্তমান প্রজন্ম জানে না বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে জেলার অবদানের কথা। এখানেই 'নান্দনিক নদিয়া ভাষা উৎসব ও মেলার' প্রাসঙ্গিকতা।’’ রবীন্দ্র গবেষক রানাঘাটের বাসিন্দা শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "রাঢ়ী উপভাষার কতগুলো ভাগ রয়েছে। সেগুলি অঞ্চল ভেদে বিভক্ত। তার মধ্যে উত্তর- মধ্য ভাগে রয়েছে নদিয়া। শিষ্ট চলিত বাংলার যে ধাঁচ, তার সাথে নদিয়ার সম্পর্ক অনস্বীকার্য। শিল্প-সাহিত্য- সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে নদিয়ার অবদান প্রচার ও প্রসারে 'নান্দনিক নদিয়া' ঘিরে যে পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অ-পূর্ব।"
প্রসঙ্গত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের তরফে একটি বৈঠক হয়। সেখানে উৎসব ও মেলাকে কেন্দ্র করে একটি সম্ভাব্য কমিটিও তৈরি হয়েছে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এ বছর ডিসেম্বরে জেলায় তিন দিনের ভাষা উৎসব ও মেলার আয়োজন করা হবে।
মূলত, জেলার মানব সম্পদ উন্নয়ন ও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিতে পর্যটনের মরসুমকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া মেলায় যেমন জেলার হস্তশিল্প, তাঁত শিল্পকে তুলে ধরা হবে। তেমনই স্থান পাবেন অন্যান্য জেলার শিল্পীরাও। ভাষাকে কেন্দ্র করে মেলা হয়ে উঠবে ভাব
বিনিময়ের সেতুও।