খুন নাকি আত্মহত্যা?
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে সুলভ শৌচাগারে সমর হালদারের দেহ মেলার পর থেকে চাপানউতোর চলছেই।
পুলিশের দাবি, মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙার বাসিন্দা সমর গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ দিকে সমরের পরিবার পুলিশ প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন, আত্মহত্যা নয়, সমরকে খুন করা হয়েছে।
১৬ অগস্ট সমরের বাবা শম্ভু হালদারকে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাবাকে দেখাশওনা করার জন্য সমরও বহরমপুরে চলে আসেন। ২১ অগস্ট সকাল ১১টা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে সমরের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। সমরের স্ত্রী ঝর্ণার অভিযোগ, ভর্তি করানোর পরে হাসপাতালে শ্বশুরের চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছিল না। সমর সেটা জানাতে গেলে হাসপাতালের লোকজন ও নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে মারধর করে। ঘটনার দিন সকালে সমর বাড়িতে ফেন করে জানান, তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে এবং তিনি খুন হতে পারেন। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মোবাইলে জানানো হয়, সমর মারা গিয়েছেন।
তৃণমূলের রোগী কল্যাণ সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজু মণ্ডল জানাচ্ছেন, ঘটনার দিন সকাল ৬টা থেকে বেশ কয়েক বার ফোন করে তাঁর বাবার চিকিৎসা হচ্ছে না বলে সমর তাঁকে জানান। পরে ওই দিন সকাল ৯টা নাগাদ আমাদের রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে আসেন সমর। মিনিট পাঁচেক পরে তিনি হন্তদন্ত হয়ে চলে যান। রাজুর দাবি, ‘‘সমরের সঙ্গে আমার কথা বলে মনে হয়েছে বাবার চিকিৎসা-সহ বেশ কিছু বিষয়ে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।’’ যা শুনে ঝর্ণার দাবি, ‘‘তেমন কোনও সমস্যা হলে আমরা তো জানতে পারতাম। নিজেই বলেছিল, ও খুন হতে পারে। তার দু’ঘণ্টার মধ্যেই ও মারা গেল। কী করে এটা সম্ভব?’’
ঝর্ণার দাবি, ‘‘এটা আত্মহত্যা নয়। ওকে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের ঘরে গিয়ে দেখতে পাই, গলার কাছে কাটা দাগ রয়েছে। থুতনির কাটা অংশ দিয়ে রক্ত ঝরছে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গা ক্ষতবিক্ষত। হাতে ও জামায় রক্ত লেগে ছিল। যদি আমার স্বামী আত্মহত্যাই করে, এত রক্ত কোথা থেকে এল!
হাসপাতালের জনবহুল ও ব্যস্ততম জায়গায় গড়ে ওঠা ওই সুলভ শৌচালয়ের পাশ দিয়েই প্রতি মুহূর্তে রোগী ও বহু লোকজন যাতায়াত করেন। সমরের পরিবারের প্রশ্ন, অত লোকজনের মধ্যে সমর সুলভ শৌচালয়ে ঢুকে আত্মহত্যা করল। আর কেউ তা দেখতে পেলনা, এটা হয় নাকি? সমরের ঘটনার পরে এখন থেকে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার শৌচালয়ের ভিতরে কাউন্টার-লাগোয়া জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকছেন। কারও আচরণে অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না, ওই সিভিক ভলান্টিয়ার নজরে রাখছেন। হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘সমরের দেহ নামানোর সময়ে দেখি শৌচালয়ের মধ্যে রক্ত পড়ে রয়েছে। হাতে ও জামায় রক্ত লেগে ছিল। তবে কোনও ভাবে থুতনি কেটে যাওয়ায় সেখান থেকে রক্ত ঝরেছে বলে মনে হচ্ছে।’’ একই কথা জানান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী মদন শেখও। মদনই সমরের মোবাইল থেকে বাড়ির নম্বরে ফোন করে মৃত্যুর খবর জানান। ঝর্ণা বলেন, ‘‘ওই খবর পেয়ে আমরা বহরমপুরের উদ্দেশে রওনা দিই।’’ ঘটনার দিনই ময়নাতদন্তের পরে সমরের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল জানান, ওই যুবকের মৃত্যু আত্মহত্যা না কি খুন, তদন্ত করে দেখার কথা পুলিশের। বহরমপুরের আইসি শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।