শুরু হল তেলকল। নিজস্ব চিত্র।
সীমান্তে সর্ষে চাষিদের দুর্ভোগ কমাতে রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকে দু’দু’টি তেল মিল গড়তে সাহায্যের হাত বাড়াল রাজ্য কৃষি দফতর।
৫ লক্ষ টাকা করে খরচের মধ্যে প্রতিটিতে ৩ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিল রাজ্য সরকার। মুর্শিদাবাদ জেলায় এই প্রথম ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট স্কিম ফর ফার্ম মেকানাইজ়েশন সংক্ষেপে এফএসএসএম প্রকল্পে এই সুবিধা পেল মুর্শিদাবাদ জেলার কোনও চাষি। এর ফলে উপকৃত হবেন সীমান্তের সর্ষে চাষিরা।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গিপুরের চর এলাকায় ভাল ফলন হয় সর্ষের। কিন্তু যানবাহন নেই চরে। ফলে সেই সর্ষে সীমান্তের চর পেরিয়ে শহরে এনে বিক্রি করতে গিয়ে লাভের মোটা অঙ্কই চলে যাচ্ছিল পরিবহণ খরচেই। এই সর্ষে বিক্রি করেই কিনে আনতে হত চড়া দামের সর্ষের তেল। চরের কোনও গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকায় এটাই ছিল সর্ষে চাষিদের বড় সমস্যা। মাস ছ’য়েক আগে সৌর বিদ্যুৎ এসেছে দু’টি চর গ্রাম পিরোজপুর ও বাজিতপুরে। সেই সৌর বিদ্যুৎকে কাজে লাগিয়ে বুধবার সেখানে চালু করা হল একটি তেল কল। একই ভাবে আর একটি তেল কল চালু হল পদ্মাপাড়ের গ্রাম রামপুরায়। তবে সেখানে বিদ্যুৎ থাকায় তেল মিল চলবে বিদ্যুতেই। দু’টি তেল কলই চালু হল বুধবার থেকে। জেলা ও ব্লকের একাধিক কৃষি আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন দুটি গ্রামেই।
রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা অমৃত হাঁসদা বলেন, “সীমান্তের চরে প্রায় হাজার বিঘে জমিতে সর্ষে চাষ হলেও পরিবহণ খরচের কারণে তা অন্য এলাকার মতো লাভজনক হয়ে উঠতে পারছিল না। তাই প্রয়োজন ছিল পরিবহণ খরচটা কমিয়ে আনা। সৌর বিদ্যুৎ আসায় তাই তেল কল করার ভাবনা চিন্তা করা হয়। কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার সরকারি প্রকল্পে ৫ লক্ষ টাকার তেল কলে ৩ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান দেওয়ায় এক চাষি তেল কল করতে আগ্রহ দেখান সীমান্ত ঘেঁষা চরে। আর একজন পদ্মা পাড়ের গ্রাম রামপুরায়, সেখানেও বিরাট পরিমাণে চাষ হয় সর্ষের।”
ব্লকের কৃষি অধিকর্তা (বিষয় বস্তু)রাজীব সাহা জানান, ১০ কিলো সর্ষে মানে স্থানীয় মাপে এক ঘানি। তাতে আধ ঘণ্টায় সেই সর্ষে পিষে সর্ষের তেল মিলেছে ৩ কিলো ৫০০ গ্রাম। খোল মিলেছে ৬ কিলো। ১ কুইন্ট্যাল সর্ষেয় তেল মিলবে গড়ে ৩৫ কিলো। খোল মিলবে ৬০ কিলো। সর্ষের দাম বাজারে ৭ হাজার টাকা কুইন্ট্যাল। বুধবারের স্থানীয় বাজারে সর্ষের তেলের কিলো ছিল ১৬৫ টাকা। ৩৫ কিলো সর্ষে থেকে আয় ৫৭৭৫ টাকা। ৩০ টাকা কিলো দরে ৬০ কিলো খোলের দাম ১৮০০ টাকা। তেল পিষতে খরচ ৭০০ টাকা। কিন্তু খোল বিক্রি হবে চরের গ্রামেই। তেল শহরের বাজারে নিয়ে যেতে পরিবহণ খরচ হবে খুবই সামান্য। সব মিলিয়ে তা চাষিদের কাছে যথেষ্ট লাভ ও সুবিধেজনক হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
চরে যিনি এই তেল কল খুলেছেন সেই লিটন শেখ বলছেন, “আমি নিজেই ১০ বিঘে জমিতে সর্ষে চাষ করেছি। এক্ষেত্রে আমার নিজের সুবিধের কথা ভেবেই মূলত এই তেল কল চালু করা।”
রামপুরার ভুপেন মণ্ডলও বলছেন, ‘‘সুবিধে তো হবেই। সরকারি সাহায্য অনেকটাই কাজে এসেছে।”
জঙ্গিপুরের মহকুমা কৃষি অধিকর্তা উত্তম কোনাই বলছেন, “মুর্শিদাবাদে এই ভাবনা সফল হলে চাষিদের আগ্রহ বাড়বে। জঙ্গিপুর থেকে শুরু হল এই প্রকল্প।”