গামছার আদলে শাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
বংশ-পরম্পরায় তাঁরা শাড়ি বুনতেন। কিন্তু তাতে লাভ কমে যাওয়ায় বছর পঁচিশেক আগে হস্তচালিত তাঁতে গামছা বোনা শুরু করেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার তরতিপুর এবং রেজলাপাড়ার তাঁতশিল্পীরা। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হচ্ছিল না। সম্প্রতি ‘বহরমপুর অ্যান্ড হরিহরপাড়া ব্লক লেভেল ক্লাস্টারে’র পরামর্শে তাঁদেরই কয়েক জন গামছার নকশা তাঁতের শাড়িতে বুনতে শুরু করেছেন। ‘ধূপছাও’ নামে সালোয়ার কামিজের ওড়নাও তৈরি করছেন তাঁরা। আর এতেই লাভের মুখ দেখছেন তাঁতশিল্পীরা। আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে চার জন তাঁতশিল্পী হস্তচালিত যন্ত্রে গামছা-শাড়ি ও ওড়না বুনছেন। ক্লাস্টারের কর্তাদের দাবি, অদূর ভবিষ্যতে অন্য তাঁতশিল্পীদের প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
সম্প্রতি গামছা-শাড়ি বোনা শুরু করা তরতিপুরের তাঁতশিল্পী মহম্মদ ইউসুফ আলি বলেন, ‘‘গামছা বুনে সংসার চলে না। নতুন ডিজ়াইনের শাড়ি বুনে আয় বেড়েছে।’’ তরতিপুরের সাবিনা খাতুন ও তাঁর মা আদরা বিবি গামছা ছেড়ে গামছা-শাড়ি বোনা শুরু করেছেন। সাবিনাও জানান, নতুন ডিজ়াইনের শাড়ি বুনে তাঁর আয় বেড়েছে। গামছার নকশায় তৈরি এই শাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে ‘তরতিপুরি গামছা-শাড়ি’। খাঁটি সুতির তৈরি এই শাড়ি বাজারে যথেষ্ট কদর পেয়েছে বলে দাবি হস্তচালিত তাতঁশিল্পীদের সমবায় ‘বহরমপুর অ্যান্ড হরিহরপাড়া ব্লক লেভেল ক্লাস্টারে’র কর্মকর্তাদের। তাঁরা জানান, হস্তচালিত যন্ত্রে দৈনিক সর্বাদিক চারটি গামছা বুনে তাঁতশিল্পীর আয় হয় ১০০ টাকা। অন্যদিকে, একটি গামছা-শাড়ি বুনতে দিনতিনেক সময় লাগে। একটি শাড়িবুনে ৬০০-৭৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি মেলে। ফলে একটি শাড়ি বুনে দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন তাঁতশিল্পী। ধূপছাও ওড়না তৈরি করেও একই আয় হচ্ছে। বহরমপুরে হস্ততাঁতের উন্নয়ন আধিকারিক দেবব্রত প্রামাণিক বলেন, ‘‘নতুন ডিজ়াইনের শাড়িতে তাঁতশিল্পীদের আয় বেড়েছে।’’ ওই ক্লাস্টারের ডিজ়াইনার সৌরভ সাহা ওড়না-শাড়ি ও ধূপছাও ওড়নার নকশা তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গামছা-শাড়ি কেবল হস্তচালিত তাঁতেই তৈরি করা যায়। আমরা ইতিমধ্যে কলকাতা ও দিল্লির প্রদর্শনীতে এই শাড়ি নিয়ে গিয়ে ভাল সাড়া পেয়েছি।’’ ক্লাস্টারের সম্পাদক স্বপনকুমার দে বলছেন, ‘‘আমাদের ক্লাস্টারে তরতিপুর এলাকায় প্রায় ৩৫০ জন হস্তচালিত তাঁতশিল্পী রয়েছেন। আমরা গামছা-শাড়ি ও ধূপছাও ওড়না তাঁদের দিয়ে তৈরি করাব। ক্লাস্টারই সে সব বাজারজাত করবে। রাজ্য সরকারের সংস্থা তন্তুজ এই শাড়ি নেবে বলে জানিয়েছে। ভবিষ্যতে উৎপাদন আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’