সপরিবারে বন্ধুপ্রকাশ। —ফাইল চিত্র
অষ্টমীর দিন বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সাহাপুরের বাড়িতে মাকে প্রণাম করে বলে গিয়েছিলেন, ‘আবার আসব’। কিন্তু মায়ারানি পাল দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি ছেলের এই যাওয়া শেষ যাওয়া হবে। দশমীর দিন জিয়াগঞ্জের বাড়িতে খুন হন মায়ারানির ছেলে বন্ধুপ্রকাশ, বৌমা বিউটি ও নাতি অঙ্গন। সোমবার নিজের টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে বসেই মায়ারানি বলছেন, “গোটা পরিবারটাই শেষ হয়ে গেল। ৬৮ বছর বয়সে এই শোক আর বইতে পারছি না। ছেলের খুনিরা ধরা পড়লে তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম, কেন তারা এমন নৃশংস ভাবে শেষ করে দিল একটি পরিবারকে? কী করে পারল ছোট্ট শিশু, অন্তঃসত্ত্বাও বৌমাকে এ ভাবে কুপিয়ে শেষ করে দিতে?”
ছেলের পরিবারের মৃত্যু নিয়ে যে সাড়া দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে তা-ও জানেন বৃদ্ধা মা। তাঁর চাপা হা-হুতাশ, “কী হবে তাতে? আমার ছেলেটা কি ফিরবে? একমাত্র নাতি কি কোলে আছড়ে পড়ে বলবে, ‘ঠাকুমা কেমন আছ?’ ছেলেকে বার বার বলেছিলাম বাড়ি ছেড়ে, এই গ্রাম ছেড়ে যাস না। গ্রামেও ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়। তুই তো ভাল ফল করেই চাকরি পেয়েছিস। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়েছিস। জানেন, ছেলেটা ৬৩৯ পেয়েছিল মাধ্যমিকে। উচ্চ মাধ্যমিকে ৬১১। পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে ভর্তিও হয়েছিল জিয়াগঞ্জেরই কলেজে। পড়া শেষের আগেই বেসিক ট্রেনিংয়ে ভর্তি হয় সারগাছিতে। প্রাথমিকে চাকরিও পায় ২০০৫ সালে। ছেলে অঙ্গনকে হয়ত আরও ভাল ভাবে গড়ে তুলতে চাইছিল। তাই গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিল সবার নিষেধ না শুনেই। শুনলে হয়ত এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না।’’
কিন্তু মায়ারানির তার চেয়েও বেশি হতাশা খুনিরা ধরা না পড়ায়। বৃদ্ধার কথায়, “পুলিশ প্রথম থেকে সক্রিয় হলে হয়তো সুরাহা হত খুনের। আসলে খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির রং লাগিয়ে দেওয়ার কারণেই হয়তো পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তা।”
শোকস্তব্ধ মা চান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক বার দেখা করে তার পুত্র হারানোর যন্ত্রণার কথা জানাতে। তাঁর কথায়, “জানি তাতে করে ছেলে, নাতি, বৌমা আর ফিরবে না। কিন্তু খুনিদের ধরতে পুলিশ হয়তো আরও একটু সক্রিয় হবে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। তা হলে হয়তো দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।”