পুলকারে নজরদারি বাড়ানোর দাবি উঠছে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বাড়ির সামনে বা মোড়ের মাথায় স্কুলগাড়ি এসে হর্ন দিচ্ছে। তার আওয়াজ শুনে খুদেদের হাত ধরে অভিভাবকেরা সেই গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন। এক সময়ের কলকাতা বা জেলা সদরের পুলকারের এমন চিত্র এখন মুর্শিদাবাদের গা গঞ্জেও দেখা যাচ্ছে। মারুতি ভ্যান, ম্যাজিক গাড়ি, টোটোর মতো গাড়ি কিংবা কোথাও কোথাও লজঝড়ে বাসকে পড়ুয়াদের নিয়ে রাস্তায় ছুটতে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ, বেআইনি হলেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন থাকা গাড়িকে স্কুলগাড়ি হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। যার জেরে কোথাও কোথাও দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে স্কুলগাড়ি।
মঙ্গলবার বহরমপুরের আখেরমিলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে খুদে পড়ুয়া ভর্তি স্কুলগাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়তেই ফের পুলকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঙ্কালসার অবস্থা বেআব্রু হয়ে পড়ল।তবে মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক বিমলকুমার শর্মা বলেন, ‘‘আমরা অন্য যানবাহনের পাশাপাশি পুলকারের উপরেও নিয়মিত নজরদারি চালাই। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। পুলকারের দূর্ঘটনা রুখতে যাবতীয় নির্দেশিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। মাসখানেক আগেও আমরা এমন বৈঠক করেছি।’’ তিনি এও জানান, আখেরমিলের কাছে দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুলকারের উপরে আরও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) নৃপেনকুমার সিংহ বলেন, ‘‘এর আগেও বিদ্যালয় গুলিকে পুলকারের বিষয়ে পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা এবং পথ নিরাপত্তার বিষয়ে যে সব নির্দেশ রয়েছে তা মানার কথা বলা হয়েছে। ফের আমরা বিদ্যালয়গুলিকে বিষয়টি বলব।’’পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যক্তিগত মালিকাধীন গাড়ি পুলকার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। শুধুমাত্র বাণিজ্যিক গাড়ি পুলকার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র ছাড়া পুলকার চালানো যাবে না। সে সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অনেক স্কুল গাড়ি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, যে সব গাড়িতে আসন সংখ্যা সাত সেখানে ১২-১৫ জন পড়ুয়া নিয়ে ছুটছে। গাড়ির টায়ার বা যন্ত্রাংশ খারাপ থাকছে। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় কিছু বিদ্যালয়ে পুলকারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা কয়েক জনে মিলে ছোট গাড়ি ভাড়া করেন। ফলে সে সব গাড়িগুলির ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মঙ্গলবার আখেরমিলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্কুলগাড়িটিও রামকৃষ্ণ মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়। ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত মহারাজ স্বামী সাধ্যনন্দ বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা নিজ উদ্যোগে গাড়ি করে পড়ুয়াদের বিদ্যালয়ে পাঠায়। সচেতন ভাবে যাতে পুলকার চালায়, সে বিষয়ে গাড়ির চালক ও অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করব।’’ তবে বহরমপুরে একটি স্কুলগাড়ির মালিক তথা চালক বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতরের সমস্ত নির্দেশিকা মেনেই আমরা স্কুলগাড়ি চালাই। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঠিক নয়। মঙ্গলবার যে দূর্ঘটনা ঘটেছে তাতেও স্কুলগাড়ির চালকও আহত হয়েছেন।’’অন্যদিকে আখেরমিলে দুর্ঘটনায় জখম পড়ুয়াদের অধিকাংশকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। গাড়ি চালকসহ তিন জন ভর্তি রয়েছে। তবে গুরুতর আহত ৯ বছর বয়সি সায়ন ঘোষ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে এখন স্থিতিশীল।