ফাইল চিত্র।
জেলে সহবন্দিদের সঙ্গে আগের চেয়ে অনেকটাই সহজ সুশান্ত চৌধুরী। মৌনতা ভেঙে তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত অনুভূতি ভাগ করে নিচ্ছে সে। মাঝে মাঝে ‘প্রেমিকা’ সুতপা চৌধুরীর প্রসঙ্গ উঠলে তীব্র অনুশোচনায় কেঁদেও ফেলছে। তাতেই ‘অশনিসঙ্কেত’ দেখছেন কারারক্ষীরা। সুশান্তকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে খবর জেল সূত্রে। গত ২ মে সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজারের রাস্তায় সুতপাকে কুপিয়ে খুন করে সুশান্ত। ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শামসেরগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে বহরমপুর থানার পুলিশ। তার পর থেকে কয়েক দফা পুলিশ হেফাজতের পর বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে জেল হেফাজতে রয়েছে সে। এই গোটা সময়ের মধ্যে একটি বারের জন্যেও নিজের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে চায়নি সুশান্ত। বাবার পাঠানো আইনজীবীকেও পত্রপাঠ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। ‘লিগ্যাল এড সার্ভিস’-এর পক্ষ থেকে আদালতে সুশান্তের হয়ে সওয়াল করেছেন এক আইনজীবী। ওই আইনজীবী নিজের মতো করে চেষ্টা চালালেও সে জামিন পেল কি পেল না, তা নিয়ে সুশান্তের কোনও হেলদোলই নেই।
শুরুর দিকে নিজের সেলে এক কোনায় চুপ করে পড়ে থাকত সুশান্ত। নাওয়া-খাওয়া-ঘুম সবই ভুলে যেত সে। তার মধ্যে ডিমেনশিয়ারও প্রভাব দেখা গিয়েছিল বলে খবর মিলেছিল জেল সূত্রে। তবে সেই ছবি এখন অনেকটাই বদলেছে বলে জানালেন এক কারারক্ষী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারারক্ষীর কথায়, ‘‘সুশান্ত এখন একটু একটু কথা বলছে। গল্পগুজব করে বাকি বন্দিদের সঙ্গে। সুতপাকে নিয়ে অনেকেই ওর কাছে জানতে চায়। ও উত্তরও দেয়। কিন্তু অনেক সময়েই কেঁদে ফেলে। হয়তো পুরনো কথা মনে পড়ে! রাগের মাথায় ও কী কাণ্ড ঘটিয়েছে, এখন হয়তো সেটা বুঝতে পারছে। ওকে কাঁদতে দেখলে আমাদেরও ভয় হয়। খারাপ কিছু যাতে না করে বসে!’’
জেল হঠাৎ কেন এমন পরিবর্তন সুশান্তের মধ্যে? মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘প্রতিশোধস্পৃহার কারণের সুতপাকে খুন করেছে সুশান্ত। ওই প্রতিশোধস্পৃহা কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকলে সেই জায়গাটা দখল করে নেবে অনুশোচনা। আর সেই সময় ভয়ঙ্কর ভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়তে থাকে। সেই কারণেই এখন বাড়তি সতর্কতা দরকার ভীষণ ভাবে।’’