ফাইল ছবি
ধরা পড়ার পরের মুহূর্তে প্রথম প্রশ্ন, ‘‘ও কি বেঁচে রয়েছে?’’
বহরমপুরে ঠান্ডা মাথায় অনেক লোকের ভিড়ের মধ্যে একের পর এক কোপে এক তরুণীকে হত্যায় অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরীকে ধরার পরে এই প্রশ্ন শুনে হতবাক শমসেরগঞ্জের ওসি। সুশান্তকে ধরতে অবশ্য তেমন বেগ পেতে হয়নি। খবর এসেছিল, বহরমপুর গার্লসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা চৌধুরীকে কুপিয়ে খুন করে পলাতক এক যুবক। তখনই পুলিশ অনুমান করে ফেলেছিল, ওই যুবকের বাড়ি মালদহে। তাই মালদহগামী সব গাড়ি জাতীয় সড়কে দাঁড় করিয়ে তল্লাশিও শুরু হয়ে যায়।
রাত দশটার কিছু পরে একটি ভ্যানে দেখা যায়, কিছু শ্রমিক ফিরছেন। পুলিশ ডালা খুলে দেখে অনেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কেবল এক জন একটা ত্রিপলের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে বসে। অন্ধকারে জ্বলে ওঠে টর্চ। দেখা যায়, সেই ব্যক্তির জুতোয় রক্ত লেগে। পুলিশ কালবিলম্ব না করে তাকে নামিয়ে আনে। দেখি মুখ? মুখ তুলতেই হাতে থাকা ছবি দেখেই পুলিশ প্রায় নিশ্চিত হয় এই সেই আততায়ী। কেবল রক্তলাগা লাল গেঞ্জিটা বদলে অন্য জামা পরেছিল সে। পুলিশের দাবি, কিছু ক্ষণের মধ্যেই সুশান্তও স্বীকার করে নেয়, সেই বহরমপুরে খুনের আততায়ী। তখনও নির্বিকার চিত্ত। তার পরেই জেনে নিতে চায় সুতপা বেঁচে রয়েছেন কি না।
রাত আড়াইটে নাগাদ সুশান্তকে বহরমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। মেয়েকে খুনের লিখিত অভিযোগ করে সুতপার বাবা স্বাধীন চৌধুরী বলেন, “মেয়ে মেসের খরচের জন্য টাকা পাঠাতে বলেছিল। কত টাকা পাঠাব জানতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ করলেও উত্তর পাইনি।” রাতভর দফায় দফায় ধৃত সুশান্তকে জেরা করে বহরমপুর থানার পুলিশ। সূত্রের দাবি, সারা রাত কিছু না খাওয়া হলেও গালভর্তি চাপদাড়ির ছোটখাট উচ্চতার যুবকের দেহভঙ্গি দুপুর দুটোতেও ছিল একই রকম বেপরোয়া। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার তিন দিন আগে থেকে বহরমপুরে আস্তানা বেঁধেছিল সুশান্ত। কিন্তু কোথায় ছিল, কার কাছে ছিল তা পুলিশ জানতে পারেনি। তবে খুনের এলাকা সে ভাল ভাবে ঘুরে দেখেছিল নিশ্চয়ই। সুতপাকে খুন করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সুতপার ফোনে ফোনও করে সুশান্ত। পুলিশ সেই ফোন ধরে তাকে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। কিন্তু সে পালায়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায় স্লোগানকে সামনে রেখে মাননীয়া ক্ষমতায় এসেছেন। আর তিনি শপথ নেওয়ার পর থেকে মেয়েরা নির্যাতিতা হচ্ছেন। ধর্ষিতা হচ্ছেন। খুন হচ্ছেন। দুষ্কৃতীরা ভয় পাচ্ছে না।’’ অভিযুক্ত সুশান্ত বিজেপি সমর্থক বলে দাবি করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য। সুকান্তের যুক্তি, ‘‘যদি তর্কের খাতিরে ধরেনি ও বিজেপি করে, তা-ও এক দুষ্কৃতী পুলিশকে ভয় পাবে না কেন?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঢাক নিজে পেটাতে পারেন! কিন্তু মানুষ বুঝতে পারেন, পরিস্থিতি কোথায় গিয়েছে।’’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্পর্কের টানাপড়েনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি নিয়ে বিরোধীরা রাজনীতি করতে চাইছে।’’