ধৃত পাত্র বাপি। —নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের প্যান্ডেলে আলোর রোশনাই। প্রচুর ধুমধাম, খানাপিনার এলাহি আয়োজন। হবে নাই বা কেন, পাত্র যে রাজ্যের স্বনামধন্য সরকারি হাসপাতালের নামী ‘চিকিৎসক’। বিয়ের আসর বসেছিল বাঁকুড়ার জয়পুরে। সবই ঠিকঠাক চলছিল। তাল কাটল এক বরযাত্রীর কথায়। গল্পের ছলে পাত্রীপক্ষের এক আত্মীয়কেই জানিয়ে দিলেন পাত্রের আসল পেশা। জানালেন, পাত্র আদতে চিকিৎসক নন, দুধ ব্যবসায়ী। বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করে সংসার চলে তাঁর। বিষয়টি পাত্রীর বাবার নজরে আনেন ওই আত্মীয়। বিয়ের মণ্ডপে ছুটে এসে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন পাত্রীর বাবা। তত ক্ষণে অবশ্য মালাবদল হয়ে গিয়েছে। সিঁদুর দান তখনও বাকি। বেগতিক বুঝে পালিয়ে যান বরযাত্রীরা। গোটা বিষয়টা জানাজানি হতেই ‘চিকিৎসক’ পাত্রকে উত্তমমধ্যম দেওয়া শুরু করে পাত্রীর পরিবার। এর পর পাত্রের গাড়ির চালক স্থানীয় থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই পাত্রকে উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের নাম বাপি চাঁদপাড়ি। বাড়ি মুর্শিদাবাদের জেলার খড়গ্রামে। পেশায় দুধ ব্যবসায়ী। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে সমাজমাধ্যমে বাঁকুড়ার জয়পুরের বাসিন্দা এক নার্সিং পড়ুয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় বাপির। নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ওই নার্সিং পড়ুয়ার সঙ্গে প্রেম শুরু করেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়েও ঠিক হয়। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার জয়পুর থানা এলাকা সেই বিয়ের আসর বসেছিল। কিন্তু বিয়ে করতে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগে শ্রীঘরে গেলেন বাপি।
বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে লগ্ন থাকায় বুধবার রাত ১টা নাগাদ পাত্রীর বাড়িতে পৌঁছয় জনা পঞ্চাশেক বরযাত্রী। ঝাঁ চকচকে প্যান্ডেল এবং বাহারি আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয় বিয়ের মণ্ডপ। আত্মীয় স্বজনদের খাওয়া দাওয়াও প্রায় শেষের মুখে। রাত দু’টো নাগাদ বরযাত্রীদেরও খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে যায়। এরপরেই বিয়ের পর্ব শুরু হয়। মন্ত্রপাঠ শুরু করেন পুরোহিত। বিয়ের পিঁড়িতে বসে যান পাত্র-পাত্রী। তবে সিঁদুর দানের আগেই ভেস্তে যায় বিয়ে।
পাত্রী পক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, একজনের সঙ্গে গল্প করতে করতে পাত্রের এক আত্মীয় সত্যি ফাঁস করে দেন। পাত্রীর বাবার কথায় সিঁদুর দানের আগেই বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে যান পাত্রী। ঘটনায় গোটা গ্রামে শোরগোল পড়ে যায়। উত্তেজনাও ছড়ায়। পরে পাত্রকে আটকে রাখা হয়। তাঁকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। শুক্রবার ধৃতকে আদালতে পেশ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
প্রতারিত পাত্রীর অভিযোগ, ‘‘নিজেকে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক বলে পরিচয় দিয়েছিল। মেডিক্যালের অনেক বিষয়ে খোঁজখবর রাখত। তাই সন্দেহ হয়নি। এতটাই বিশ্বাস করেছিলাম যে, ওর বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজনও মনে করিনি। আমি বুঝতে পারছি, জীবনটা শেষ হওয়ার আগে ঈশ্বর বাঁচিয়ে দিল।’’
অন্য দিকে, ধৃতের পাত্রের দাবি, ‘‘সমাজমাধ্যমে ওকে দেখে ভালো লেগে গিয়েছিল। বুঝেছিলাম চিকিৎসক ছাড়া পছন্দ করবে না। তাই অন্যায় জেনেও, এই পথ বেছে নিয়েছিলাম।’’