হেরিটেজ কমিশনের অধিগ্রহণের কথা জানিয়ে বোর্ড ঝোলানো হল নিমতিতা রাজবাড়িতে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
হেরিটেজ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি জুটেছিল গত বছর ১ জুন। ঠিক তার এক বছর পর বুধবার নিমতিতা রাজবাড়ি চত্বরে বসল সরকারি বোর্ড। সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেরিটেজ কমিশনের আদেশনামা। মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলার পর্যটন আধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডল নিমতিতায় এসে আনুষ্ঠানিক ভাবে নোটিস বোর্ড বসিয়ে এই হেরিটেজ ভবনকে সুরক্ষার উপর জোর দেন।
স্থানীয় ইতিহাসবিদদের দাবি, ১৫৭ বছরের প্রাচীন এই রাজবাড়ি। ছাদ ভেঙে পড়ছে। খসে পড়ছে দেওয়ালের ইট। নিমতিতায় গঙ্গা পাড়ের বিশাল জমিদার বাড়ি জুড়ে শুধু আগাছার জঙ্গল। ভেঙে পড়েছে ঠাকুর দালান। এই দালান বাড়িতেই এক সময় সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’-এর শুটিং চলেছে দিনের পর দিন। শুটিং হয়েছে ‘দেবী’র। তখন অনেক দিন এই বাড়িতেই কাটিয়েছেন ছবি বিশ্বাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, বহু ইতিহাসের সাক্ষী সেই নিমতিতা রাজবাড়িকে হেরিটেজ ভবন হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা এই এলাকাকে পর্যটনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিক খুলে দেবে। গত বছর ১৭ মার্চ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ওএসডি বাসুদেব মালিকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ঘুরে দেখে যান নিমতিতা রাজবাড়িটি। শমসেরগঞ্জের নিমতিতার শেরপুর মৌজায় ১.২২ একর জমির উপর গড়া এই ভবন।
রাজবাড়ির অন্যতম উত্তরসূরি রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “বাংলা সন ১২৭২ নাগাদ গৌরসুন্দর চৌধুরী তাঁর ভাই দ্বারকানাথ চৌধুরীর সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের আওতায় নিমতিতা এস্টেট নামে জমিদারি স্থাপন করেন। তখনই নির্মিত হয় এই ভবন। সে বাড়িতে এসেছেন নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, শিশিরকুমার ভাদুড়ী, অপরেশ মুখোপাধ্যায়। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলামও এসেছেন বাড়িতে। সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় সপরিবার এক সপ্তাহ কাটিয়ে গিয়েছেন এখানে। ১৯৫৭ সালে সত্যজিৎ রায় জলসাঘর ছবির শুটিং করেন। পরে ১৯৫৯ এবং ১৯৬০ সালে দু’বার এসেছিলেন দেবী এবং সমাপ্তি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তথ্যচিত্রের কিছু অংশের সুটিংয়ের জন্য।
মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক অরিন্দম রায় বলেন, “কয়েক বছর ধরে ঐতিহাসিক নিমতিতা জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য আমরা বিভিন্ন দফতর ও জমিদার বাড়ির পরিবারের কাছে লিখিত আবেদন করে চলেছি। জেলা প্রশাসনের কাছে একাধিক বার চিঠি লিখেছি হেরিটেজ স্বীকৃতি প্রাপ্ত ওই বাড়ির সামনে সরকারি বোর্ড বসানোর জন্য। তাতে সাড়া দিয়ে জেলা প্রশাসন বুধবার এই বোর্ড বসানোয় আমরা খুশি।” তিনি জানান, সুরক্ষার অভাবে বাড়িটির জানালা দরজা সহ বহু জিনিস চুরি হয়ে যাচ্ছে। জেলা পর্যটন আধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডল জানান, সাধারণ মানুষদের হেরিটেজ সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে অবগত করতে এই বোর্ড লাগানো হল, যাতে সাধারণ মানুষ এর ইতিহাস সংরক্ষণে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারেন।’’