কান্না মায়ের। নিজস্ব চিত্র
সাঁতার জানত না ছেলে। তাই প্রতি বার প্রতিমা বিসর্জনের আগে পইপই করে ছেলেকে জলে নামতে বারণ করে দিতেন মা। এ বার বলা হয়নি। সুযোগই পাননি। আর তাই প্রতিমা ভাসানে গিয়ে ছেলের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে একটানা বিলাপ করে চলেছেন তিনি। বলেন, “কেন যে ওকে এ বার জলে নামতে বারণ করলাম না। করলে জলে নামত না। তা হলে এ ভাবে চিরদিনের মতো জলে হারিয়ে যেত না ছেলেটা।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমার সঙ্ঘের প্রতিমা বিসর্জন দিতে গিয়েছিল কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণী ঘরামিপাড়ার বাসিন্দা রাহুল বিশ্বাস (২০)। প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে সকলে ফিরে এলেও ফেরেননি রাহুল। অনেক পরে সকলের তা খেয়াল হয়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সকলে ছোটেন জলঙ্গি নদীর জগৎবন্ধু ঘাটে। সেখানেই বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল প্রতিমা। টর্চের আলোয় দেখা যায়, নদীর পাড়ে পড়ে রয়েছে রাহুলের চটি জোড়া। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। রাতেই নদীতে জাল ফেলা হয়। ভোরে মেলে রাহুলের দেহ।
ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে কুমার সঙ্ঘের পুজো শুরু হয়। অন্য বারের মতো এ বারও পাড়ার সকলে মিলে প্রতিমা নিয়ে হাজির হয়েছিল জলঙ্গি নদীর ঘাটে। কোনও বারই রাহুল জলে নামেননি। কিন্তু এ বার কেন নামলেন? জবাবে রাহুলের এক আত্মীয় সুদীপ বিশ্বাস বলছেন, “প্রতিমা জলে ফেলার সময় এক দিকে কাত হয়ে যায়। রাহুল সেই দিকটা ধরেছিল। না হলে প্রতিমা উল্টে যেত। সেই অবস্থায় জলে নেমে আর হয়তো উঠতে পারেনি।”
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগরের ডন বসকো স্কুলের আইটিআই থেকে ইলেট্রিক্যাল পাশ করে আসাননগর মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন রাহুল। দিন কয়েক আগে আইটিআই-র রেজাল্ট বার হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি একটা বেসরকরি সংস্থায় চাকরিও পেয়ে যান। বাবা হিমাংশু বিশ্বাস ঠিকাদার। একান্নবর্তী পরিবার। বৃহস্পতিবার জ্যাঠতুতো দাদাদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে বেরিয়েছিলেন রাহুল। রাহুলের মা অর্চনা বলছেন, “চোখের সামনে দিয়ে ছেলেটা সকলের সঙ্গে নাচতে নাচতে চলে গেল। ছেলেকে যে জলে নামতে বারণ করব সেই সুযোগটাই এ বার পেলাম না।” ঘাট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে রাহুলের চটি জোড়া। ধুয়ে যত্ন করে রেখে দেওয়া হয়েছে ঘরের এক কোণে। যেন এটাই গোটা পরিবারের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।