প্রতীকী ছবি
বাড়িতে প্রসবের জেরে মৃত্যু হল এক প্রসূতির। সদ্যোজাত শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে।
ধুলিয়ান শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে খরবোনা পল্লিতে সোমবার সকালের এই ঘটনায় ফের সামনে এনেছে এলাকায় সংস্কারের পুরনো চোহারাটা।
হাসপাতাল এড়িয়ে বাড়িতে প্রসবের ঘটনা ওই এলাকায় নতুন নয়। এক কিলোমিটারের মধ্যেই হাসপাতাল। প্রান্তিক কোনও গ্রামও নয়, তবুও খরবোনা এলাকায় ‘হোম ডেলিভারি’ বা বাড়িতে প্রসব সাবেক রীতি, এমনই দাবি স্বাস্থ্য দফতরের।
এ দিন সকালে প্রসবের সময়ে অত্যধিক রক্তক্ষরণের জন্যই মেরিনা বিবি (৩৫) নামে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পারিবারিক সূত্রে দাবি, মেরিনার এটি তৃতীয় প্রসব। বরাবরই তাঁর সন্তান প্রসব হয়েছে বাড়িতে। তাঁর প্রথম শিশুটিও জন্মের পরেও মারা গিয়েছিল।
ধুলিয়ান শহরে মেরিনার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই গ্রামীণ হাসপাতাল। তবু আত্মীয় পরিজনেরা তাঁকে হাসপাতলে না পাঠিয়ে বাড়িতে প্রসব করাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। মৃতার আত্মীয়া তুহিনা বিবি বলেন, “সকাল থেকেই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। বাড়ির মহিলাদের সকলেরই এ পর্যন্ত সন্তান বাড়িতেই হয়েছে। এ বারও তাই দাইয়ের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছিল মেরিনাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুত্র সন্তান হয়।’’
কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ ছিল প্রসূতির। তাই রক্তক্ষরণ শুরু হলে বেগতিক দেখে প্রসূতিকে গাড়ি করে অনুপনগর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসক মা ও শিশু দু’জনকেই রেফার করেন জঙ্গিপুর মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। পথেই মৃত্য হয় মেরিনার। তবে, মেরিনার মৃত্যুর পরেও বাড়ির যে হুঁশ ফেরেনি মৃতার জা শুকতারা বিবির কথাতেই তা স্পষ্ট, “আমাদের সবার সন্তানই তো বাড়িতে হয়েছে। ভালভাবেই তো হয়েছে। কোনও সমস্যা তো হয়নি।’’
শমসেরগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন বলেন, ‘‘সংস্কারের কারণে ওই এলাকার অধিকাংশ প্রসূতিকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয় না। শহরের মধ্যে তাদের বাড়ি। নিশ্চয়যান আছে, শহরে অন্য যানবাহনও কম নেই। তবু তাঁদের হোম ডেলিভারির রেওয়াজ গেল না।’’
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলছেন, “শমসেরগঞ্জ অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া ব্লক। প্রসূতিরা বেশির ভাগ চিকিৎসক পরীক্ষা করতে চাইলেই আপত্তি তোলেন। তবু গত বছর যেখানে হোম ডেলিভারি ছিল ১৭৮০, এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭২। ৩০০ শয্যার মাদার চাইল্ড হাব তৈরির কাজ চলছে এই গ্রামীণ হাসপাতালে। সেটি চালু হলে চিকিৎসক বাড়বে, পরিষেবাও উন্নত হবে। কিন্তু স্থানীয় মানুষকে সামাজিক সংস্কার ভুলে হাসপাতালে আসতে হবে।’’
তবে এর উল্টোচিত্রও আছে। প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ বসতির শমসেরগঞ্জ ব্লকে তিনটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দু’টিতে অন্তর্বিভাগ বন্ধ দীর্ঘ দিন। ৩০ শয্যার অনুপনগর গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ থাকে। এই মুহূর্তে ৩০ জন রোগীর জায়গায় রোগী ভর্তি রয়েছেন ১২০ জন। অধিকাংশই প্রসূতি।