Mother

Death: জোগাড় হয়নি রক্ত, মারা গেলেন প্রসূতি

প্রসূতি মৃত্যুতে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে মুর্শিদাবাদ। ২০২০-’২১ সালে জেলায় ১৮১ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। ২০২১-’২২ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৩৯।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২২ ০৭:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

দু’ সপ্তাহের মধ্যে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে তিন প্রসূতির মৃত্যু উদ্বেগ বাড়াল জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। সূত্রের খবর, তিন জনকেই তিনটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ‘রেফার’ করে আনা হয়েছিল ওই মহকুমা হাসপাতালে। এঁদের মধ্যে দু’জনের সন্তান প্রসব হয়েছিল বাড়িতেই। অন্যজনের বাড়িতে ‘দাইমা’কে ডেকে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করতে গিয়ে মহিলার অবস্থার অবনতি হয়। প্রথমে তেঘরি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরে জঙ্গিপুর হাসপাতালে পাঠানো হলে এক্লেমসিয়া ও রক্তক্ষরণ শুরু হয় তাঁর। পরে মৃত্যু হয় রোগীর।

Advertisement

প্রসূতি মৃত্যুতে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে মুর্শিদাবাদ। ২০২০-’২১ সালে জেলায় ১৮১ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। ২০২১-’২২ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৩৯। এই পরিস্থিতিতে দু’সপ্তাহে তিন প্রসূতির মৃত্যু চিন্তা বাড়িয়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। সূত্রের খবর, তিন জন মা’রই মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ‘পোস্ট পারটেম হেমারেজ’। মূলত বাড়িতে প্রসবের জন্যই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বলে মনে করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, রক্তক্ষরণ আটকাতে ওষুধের পাশাপাশি রক্ত দেওয়াও জরুরি। কিন্তু অভিযোগ, সময়ে পর্যাপ্ত রক্ত মেলেনি জঙ্গিপুর হাসপাতালে।

মহেশাইল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আসা প্রসূতির সঙ্গে কেবল একজন মহিলা ছিলেন। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা তাঁকে জানিয়ে ছিলেন যে, রোগীর রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু জঙ্গিপুরে রোগীকে আনার পর ওই মহিলা এক ইউনিট রক্ত জোগাড় করতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক একাধিক জায়গায় ফোন করেন, এক ইউনিট রক্তের জন্য। কিন্তু রক্তের ব্যবস্থা করা যায়নি। রক্ত না পেয়ে মারা যায় রোগী। রবিবার মৃত্যু হয় মেরিনা বিবি নামে আরেক প্রসূতির। এই প্রসূতিকেও অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেখানে আনা হয়েছিল। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন জানান, রক্তক্ষরণ হওয়ায় মেরিনার তিন ইউনিট রক্তের প্রয়োজন ছিল। রক্ত না মেলায় জঙ্গিপুর হাসপাতালের চিকিতসক সুব্রত মাঝি ও এক স্বাস্থ্যকর্মী তাঁকে শনিবার রাতেই দু’ ইউনিট রক্ত দেন। কিন্তু বাঁচেননি রোগী। বিএমওএইচ বলেন, “শমসেরগঞ্জে বাড়িতে প্রসব থেকেই রক্তক্ষরণ, এক্লেমসিয়া দেখা দিচ্ছে। এবং তাতেই প্রসূতিরা মৃত্যু ডেকে আনছেন। প্রতিটি হাসপাতালে প্রসূতিদের রক্তক্ষরণ নিয়ে ভর্তি বাড়ছে।’’ কেন্দ্রীয় সরকার প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে এ রাজ্যে মাতৃ-মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রকাশিত হয়েছে। তাতেই নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর। এখন থেকে প্রতিদিন প্রসূতি মৃত্যুর কারণ রিভিউ করবে স্বাস্থ্যভবন। যেখানে মৃত্যু ঘটবে সেই হাসপাতালের সুপার, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে প্রসূতির মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। প্রতিটি প্রসূতি মৃত্যুর অডিট হবে।

Advertisement

তবে রক্তক্ষরণ ঠেকাতে রক্তের পর্যাপ্ত জোগানও জরুরি। কিন্তু রক্ত-সঙ্কট চরমে। জঙ্গিপুরের এক রক্তদাতা সংস্থার কর্তা তাসলিম শেখের কথায়, ‘‘বোর্ড টাঙানো হোক জেলার ছ’টি বড় সরকারি হাসপাতালে। তাতে সমস্ত সংস্থার নাম ও ফোন নম্বর লিখে দেওয়া হোক। যাতে সাধারণ রোগীরা তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।’’ জঙ্গিপুর হাসপাতালের সুপার অবিনাশ কুমারকে একাধিক বার ফোন করা হলেও ফোন বেজে যায়। উত্তর মেলেনি মেসেজেরও। সাগরদিঘির এক সংস্থার সম্পাদক সঞ্জীব দাস বলছেন, “ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রেফার হওয়া সব সঙ্কটজনক প্রসূতিদের একজন করে ডোনার সঙ্গে থাকা সুনিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্যাল বলেন, “হোম ডেলিভারি ঠেকাতে সব রকম চেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি পয়েন্টকে চিহ্নিত করে সেগুলিতে ২৪ ঘণ্টা প্রসব চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শীঘ্রই তা চালু হচ্ছে পুটিমারি, উত্তর মহম্মদপুরের মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement