প্রতীকী ছবি।
খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণের পর প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নিতে গিয়ে ঠোক্কর খাচ্ছে বহরমপুর থানার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা।
ইদের আগের দিন সোমবার ভর সন্ধ্যায় গোরাবাজার শহিদ সূর্য সেন রোডের সুইমিংপুলের গলিতে এক কলেজ ছাত্রীকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেছিলেন বহু মানুষ। যাঁদের অনেকেই সেই কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরীকে তাঁর ‘প্রেমিক’ বলে নিজেকে দাবি করা সুশান্ত চৌধুরীর নির্বিকার মুখে নৃশংস খুনের ঘটনা, উদভ্রান্তের মতো ভোজালি দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেছিলেন। ঘটনার পর মুহূর্তেই সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেও বেশি ক্ষণ লাগেনি।
তা ছাড়াও বহু মানুষ যাঁরা সেই সময় দরকারে অদরকারে ওই গলিপথে যাতায়াত করছিলেন ঘটনার সময়, ঘটনার আকস্মিকতায় সে দিন তাঁরাও থমকে দাঁড়িয়ে দেখেছেন সেই নৃশংস হত্যা। যাঁদের অনেকেই “সে দৃশ্য ভোলার নয়” বলে জানাচ্ছেনও। এমনকি সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই সুশান্ত ও সুতপাকে চিনতেন। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে পুলিশের কাছে তাঁদের সাক্ষ্য দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ‘পুলিশি ঝঞ্ঝাট এড়াতে’ কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
যদিও এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের শনাক্তকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিকের দাবি, অন্তত তিন জন সাক্ষী পেলে ধৃত ব্যক্তিই যে খুনি, তা প্রমাণ করা আদালতে সহজ হবে।
তবে সুতপাকে ভালবেসে না পাওয়ার যন্ত্রণাতেই যে সুশান্ত তাঁকে খুন করেছে, ধৃতকে জেরা করে এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি সুশান্তকে নিয়ে বহরমপুর থানার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের মালদা যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বহরমপুরে ডেকে পাঠানো হয়েছে সুতপার বাবাকেও। তবে সুতপা ও সুশান্তের মধ্যবর্তী এক জন তৃতীয় ব্যক্তিকে পুলিশ এখনও খুঁজছে যার মাধ্যমে একে অপরের নিখুঁত গতিবিধি জানতে পারত। তার আভাস পুলিশ পেলেও এখনও তা নিয়ে কোনও ইঙ্গিত দিতে নারাজ তারা।
সুশান্ত ও সুতপার বাজেয়াপ্ত মোবাইল খতিয়ে দেখে সে ব্যপারে আরও নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিশ। দু’টি মোবাইল, সুশান্তের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত সামগ্রী ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ দিনও পুলিশ লকআপে সুশান্তকে শুয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়েছে তার। তবে ঘটনার দিন জঙ্গিপুর কলেজের যে ছাত্রের সঙ্গে সুতপা স্থানীয় মোহন মলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল তার সঙ্গে “ভালবাসার সম্পর্ক” ছিল না বলেই দাবি সুতপার একাধিক সহপাঠীর। যদিও সেই সিনেমার টিকিট পায়নি পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুতপার এক সহপাঠী জানায়, “সুতপা খোলামেলা মনের মানুষ ছিল। তার মুখে সুশান্তর কথাই শুনেছিলাম। সে যে ওকে বিরক্ত করত তাও বলেছিল। বলত ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সে। কিন্তু অন্য কোনও ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা কখনও শুনিনি।” যদিও জঙ্গিপুরের ছেলেটির সঙ্গে সুতপার পরিবারেরও যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের দাবি।
গোরাবাজার জজকোর্ট এলাকায় এক শিক্ষকের কাছে জুওলজি পড়ত সুতপা। ২০২১ সালের নভেম্বরের শেষ দিক থেকে অফলাইনে টিউশন শুরু হয়। তারপর থেকে নিয়মিত সেখানে পড়তে যেত সুতপা।
বহরমপুর গার্লস কলেজের ছাত্রীদের সঙ্গে জঙ্গিপুর কলেজের চার ছাত্রও পড়তে যেত।
ওই শিক্ষক শুভাশিস মণ্ডল বলেন, “পড়াশোনায় সুতপার একাগ্রতা ছিল। রাস্তায় দেখলে সম্মান জানাত। মেসের রান্না করার জন্য ফাঁকা গ্যাস সিলিন্ডার ভরে নিয়ে যাওয়া দেখে বুঝেছি দায়িত্ব নিতেও পিছ পা হত না সে। ঘটনার আগের দিন রবিবারেও পড়তে এসেছিল।”
বৃহস্পতিবার কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর মৃত্যুতে শোকসভা পালন করেছে বহরমপুর গার্লস কলেজ। সুতপার খুনের বিচার চেয়ে ফেসবুক পেজ খুলেছেন নাগরিকরা। সেখানে সুশান্তের ফাঁসি চাই বলে দাবি উঠেছে।