সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরপর দু’দিন হামলার ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও মূল অভিযুক্ত মশিউর রহমান অধরাই।
পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নাম সাদেকুল শেখ, সাগর শেখ, জামিরুল শেখ ও রবিউল শেখ। ধৃতেরা তৃণমূল সমর্থক বলে এলাকায় পরিচিত। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। কিন্তু মশিউর তো বটেই, তার অন্যতম শাগরেদ বাপি শেখ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ধরা পড়েনি।
এর ফলে বিরোধীরা যে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হবেন, তা তো প্রত্যাশিতই। সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, ‘‘চুনোপুঁটিদের ধরে পুলিশ আসল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। শাসক দলের নেতাদের তুষ্ট করতে গোটা রাজ্যেই তো এই চলছে!’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘দল অপরাধীদের কোনও রকম ছাড় দেবে না। যে নেতারা তাদের মদত দিচ্ছেন, তাঁদের ভুগতে হবে।’’
মঙ্গলবার দুপুরে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মীয়মাণ ইউনিটে দু’টি ঠিকা সংস্থার অফিসে ঢুকে তাণ্ডব করার অভিযোগ রয়েছে মশিউর ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। মার খেয়েছেন দুই প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং বেশ কয়েক জন কর্মী। তামিলনাড়ু থেকে আসা প্রজেক্ট ম্যানেজার এস শিবরাজ বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। ওই দিনই ঠিকা সংস্থার তরফে সাগরদিঘি থানায় মশিউর-সহ ২৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই রাগে পরের দিন, বুধবার সকালে মশিউরের দলবল ফের দুই ইউনিটে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তাতে বাধা দিতে গিয়ে দুই নিরাপত্তারক্ষী জখম হন।
মশিউরের বিরুদ্ধে তোলাবাজি-মারধরের নানা অভিযোগ আগেও উঠেছে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠ নের দুই গোষ্ঠীর কাজিয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিস্থিতি বারবার অশান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ। গত এক বছরে সাগরদিঘি ও রঘুনাথগঞ্জ থানায় এ রকম ১৪টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু কেউ গ্রেফতার হয়নি। তৃণমূলের লোকজন অভিযুক্ত হওয়ায় পুলিশ তাদের ধরছে না বলে আক্ষেপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনেকেরই। বারবার ঝামেলায় দু’টি ইউনিটের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তাঁরা অনুযোগ করছেন।
এর পরেও অবশ্য মশিউরকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শাসক দলের একটি গোষ্ঠী। এর মধ্যে সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস যেমন রয়েছেন, আছেন ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে তৃণমূলের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক সমরেন্দ্র পর্বতও। তা নিয়ে দলেই যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। ইমানি বা সমরেন্দ্র অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন।
পুলিশ কেন অভিযুক্তদের ধরছে না, বুধবারই প্রশ্ন তুলেছিলেন সাগরদিঘির তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহা। এমনকী পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতে এ সব চলছে এবং সেই কারণে মশিউর বা বাপির মতো অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তাঁর। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য আশ্বাস দেন, ‘‘দু’জনকে ধরতে তল্লাশি চলছে।’’