Mobility

সোর্স বাড়াতে প্রত্যন্ত গ্রামে ভ্রাম্যমাণ থানা

জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় এবং করোনা আবহে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা অনেকেই তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা থানায় জানাতে আসতে পারতেন না। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে তাদের অভাব অভিযোগ শোনার জন্য ভ্রাম্যমাণ থানার বন্দোবস্ত করা হয়।’’

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০৮
Share:

ভ্রাম্যমাণ থানা। মহিষমারায়।

করোনা আবহে প্রত্যন্ত গ্রামে ভ্রাম্যমাণ থানা বসিয়ে গ্রামে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শুনছেন পুলিশের কর্তারা। তাতে পুলিশের সোর্সও বাড়ছে। সরাসরি গ্রামের মানুষের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে পুলিশ অফিসারদের ফোন নম্বর। গ্রামে যাঁদের স্মার্ট ফোন রয়েছে, তাঁরা ডাউনলোড করে নিচ্ছেন পুলিশের আলোর পথে অ্যাপ। তাতে যে কোনও ছোটখাট খবরও পুলিশের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘করোনা আবহে আমাদের লক্ষ্য ছিল জেলার প্রতিটি কোনে পৌঁছন। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আমরা মোবাইলে, অ্যাপে গোপন খবর পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমরা
সফল হয়েছি।’’

Advertisement

এনআইএ এবং এসটিএফ সম্প্রতি জেলার বেশ কয়েক জন যুবককে জঙ্গি যোগের সন্দেহে গ্রেফতার করেছে। তার পরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের এই প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। হরিহরপাড়া থানার ওসি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভ্রাম্যমাণ থানার ফলে আমাদের সোর্স অনেকটাই বেড়েছে। যে কোনও অসামাজিক কাজ হলেই অনেকে আমাদের গোপনে খবর দিচ্ছেন। অনেক সময় আমরা আগাম খবর পেয়েও পদক্ষেপ করতে পারছি।’’
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার প্রতিটি থানার পক্ষ থেকে থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে মাসে অন্তত একবার করে ভ্রাম্যমাণ থানা বা পুলিশ সহায়তার বন্দোবস্ত করছেন ওসি, আইসি-রা।

সাধারণ মানুষও পুলিশ কর্তাদের নাগালে পেয়ে এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরছেন। বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও হচ্ছে।

Advertisement

তবে শুধু সমস্যার সমাধান বা অভাব অভিযোগ শোনা নয়। এলাকায় যে কোনও ধরনের অপরাধ মুলক কাজ বা অসামাজিক ঘটনা ঘটলে যাতে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা পুলিশকে জানাতে পারেন, তার জন্য ওসি, আইসি-রা নিজেদের মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দাদের। শুধু তা-ই নয়, জেলা পুলিশের আলোর পথে নামে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে কিভাবে তাঁরা পরিষেবা পাবেন, সে বিষয়েও তাঁরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন।

এলাকার যুব সম্প্রদায় অনেকেই সেই অ্যাপ নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ডাউনলোড করে নিচ্ছেন। পুলিশের কর্তারাও বলছেন, প্রত্যন্ত গ্রামে ভ্রাম্যমাণ থানার ফলে পুলিশের সোর্স বাড়ছে। এলাকায় যে কোনও অসামাজিক কাজকর্ম হলেই ফোন আসছে পুলিশের কাছে। অনেকে আবার জেলা পুলিশের ওই অ্যাপে নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন।

ফলে নানা ধরনের উপকারই হচ্ছে। এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা, মদ, জুয়া, হেরোইনের ঠেক কিংবা চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা, বাল্যবিবাহের বন্দোবস্ত অথবা এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা সব কিছুর খবর পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশের কাছে। জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় এবং করোনা আবহে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা অনেকেই তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা থানায় জানাতে আসতে পারতেন না। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে তাদের অভাব অভিযোগ শোনার জন্য ভ্রাম্যমাণ থানার বন্দোবস্ত করা হয়।’’ তিনি জানাচ্ছেন, এর ফলে একদিকে যেমন পুলিশের সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে, অন্যদিকে পুলিশের খূর পাওয়ার পথও বাড়ছে।

ফলে প্রত্যন্ত গ্রামে যে কোনও ধরনের অসামাজিক কাজকর্ম হলেই পুলিশের কাছে নিমেষেই খবর পৌঁছে যাচ্ছে। আর পুলিশও নিজেদের সোর্সের নাম পরিচয় গোপন রেখেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ
ব্যবস্থাও নিচ্ছে।

যেমন, হরিহরপাড়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে থানার দূরত্ব প্রায় ২০ কিমি, মহিষমারা গ্রাম থেকেও থানার দুরত্ব প্রায় ২৫ কিমি। ফলে ছোটখাট ঘটনার কথা পুলিশের কাছে আসত না। গ্রামের মানুষ অত দূর যেতে চাইতেন না। পরে ওই ঘটনাগুলিই কিন্তু বড় আকার ধারণ করত। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ থানার ফলে এখন অধিকাংশ খবরই পৌঁছে যাচ্ছে পুলিশের কাছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement