রক্ত ঝরলে খুলি ওড়াব, হুঙ্কার রাতের হাসপাতালে

বিহার-উত্তরপ্রদেশের বাহুবলীর অনুশাসন কিংবা মুম্বইয়ের ডনের চাপা হুঙ্কার মনে হলেও ঘটনা আদতে সাবেক মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ হাসপাতালের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২০
Share:

হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাতে এসে রিভলভার উঁচিয়ে শাসানি ছিল— ‘স্যালাইনের সূঁচ ফোটাচ্ছ ফোটাও, তবে এক ফোঁটা রক্ত বেরলে কিন্তু সক্কলের খুলি উড়িয়ে দেব!’

Advertisement

হতচকিত নার্স-চিকিৎসকের যখন ঢোঁক গিলছেন, তখন ফের উড়ে এসেছিল হুমকি, ‘নাও দেরি কোর না!’ রক্ত বেরোয়নি, দেখে রিভলভার পকেটে ভরে ছেলেটি জানিয়ে ছিল, ‘যাক বেঁচে গেলে!’

বিহার-উত্তরপ্রদেশের বাহুবলীর অনুশাসন কিংবা মুম্বইয়ের ডনের চাপা হুঙ্কার মনে হলেও ঘটনা আদতে সাবেক মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ হাসপাতালের। তবে, আশ্চর্যের ব্যাপার ওই ঘটনার পরে স্থানীয় ওই যুবককে আটক করা হলেওপুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশুমান সাহা বলছেন, ‘‘অভিযোগ না পেলে কী করে গ্রেফতার করি বলুন তো!’’

Advertisement

মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘আজিমগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, এ বার পুলিশে জানাব।’’

আরও পড়ুন: তৃণমূল কাউন্সিলর তোলা নেন, সরব যুবনেতা

বৃহস্পতিবার রাতে, ওই খোলা রিভলভারের সামনে দাঁড়িয়ে রোগীর হাতে সূঁচ বিঁধিয়ে ছিলেন যে নার্স, সেই উপমা ভৌমিক বলছেন, ‘‘বড় ভয় করছে জানেন, এ ভাবে কাজ করা যায়!’’জিয়াগঞ্জ-আজিমঞ্জ পুরসভা এলাকার রেল-শহর আজিমগঞ্জের ওই হাসপাতালটি বৃটিশ আমলের। দশ শয্যার ওই হাসপাতালে রাত আটটা নাগাদ ভর্তি করানো হয় স্থানীয় বাসিন্দা বছর তেইশের সনকা বিশ্বাসকে। লক্ষ্মীপুজোর উপোস করায় তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছলেন।

উপমা বলেন, ‘‘আটটায় আমাদের ডিউটি বদলের সময়। হাসপাতালের একটি ঘরে গিয়ে পোশাক বদল করছিলাম। মোটে চার জন নার্স। ডিউটি বদলের সময়ে ওই ঘরে কোনও নার্স ছিলেন না।’’

আর, তাতেই খেপে যায় সনকা বিশ্বাসের প্রতিবেশী ওই যুবক। উপমা ঘরে ঢুকতেই প্রথমে তাঁর মাথায় ধরা হয় রিভলভার,তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটি বলল, স্যালাইন দেওয়ার সময় এক ফোঁটা রক্ত ঝরলে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব।’’ চিকিৎসক প্রদীপকুমার বিশ্বাস ওয়ার্ডে ঢুকতেই তাঁকেও পিস্তল উঁচিয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হয়।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক সৌরভ মাহাতো বলেন, ‘‘সনকা বিশ্বাসের চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি হয়নি। সুস্থ হলে শুক্রবার সকালে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটিও দেওয়া হয়েছে।’’ তিনিও জানান, চার জন নার্স আর দু’জন চিকিৎসক নিয়ে হাসপাতালের কর্মীদের জেরবার অবস্থা। ওই ঘটনার পরে কেউ আর রাতের ডিউটি করতে চাইছেন না।

হাসপাতালের কর্মীরা জানান, প্রায় রোজই নানান ঝামেলা সামলাতে হয় রাতবিরেতে। তবে পিস্তল উঁচিয়ে এমন হুমকি এই প্রথম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement