Hilsa Fish

পুজোয় গঙ্গায় ইলিশের বন্যা বইবে, আশা

পদ্মা বা গঙ্গায় বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও প্রজনন মরসুমে ইলিশ ধরা যায় না। কিন্তু আইনের বাস্তব প্রয়োগ এ রাজ্যে সে ভাবে নেই বললেই চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০৯
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাংলাদেশ থেকে আপাতত ইলিশ আসা বন্ধ রয়েছে। ২২ দিন ধরে সে দেশে ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ায় এ বার দুর্গাপুজোয় আর এ রাজ্যে ইলিশ আসছে না। কিন্তু সরকারি ভাবে না এলেও পুজোর মরসুমে ইলিশের ভরসায় দিন গুনছেন ফরাক্কা ও নিমতিতার কয়েকশো মৎস্যজীবী।

Advertisement

১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তবে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের আশা, এ বারও নিমতিতা থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত গঙ্গায় ইলিশের বান আসবে। গত সাত-আট বছর ধরে অক্টোবরের এই সময় বাংলাদেশ থেকে পদ্মা বেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ঢুকে পড়ে নিমতিতার গঙ্গায়। আর তা ধরতেই গঙ্গায় জাল নিয়ে নেমে পড়েন মৎস্যজীবীরা। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার সে দেশের ৩৮টি জেলায় ইলিশ ধরা ও বিক্রি করা নিষিদ্ধ করেছে ২২ দিনের জন্য। কারণ, এই সময় সমুদ্র থেকে ইলিশ পদ্মায় ডিম পাড়তে আসে।

গত কয়েক বছর ধরে এই সময় তাই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশে। শুধু মাছ ধরাই নয়, আহরণ, পরিবহণ, মজুত, ক্রয়-বিক্রয়, নিষিদ্ধ সব কিছুই। তাতে ইলিশের উৎপাদনও যথেষ্ট বেড়েছে বাংলাদেশে। ১৯৭১-’৭২ সালে সে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল মাত্র ৮.১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০২০-’২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৬.২১ লক্ষ মেট্রিক টন। তাই এই সময় ইলিশ ধরলেই মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি ১০ হাজার বাংলাদেশি টাকা জরিমানা এমনকি ২ বছরের জেলের মতো কঠোর সাজার বিধান রয়েছে বাংলাদেশে।

Advertisement

পদ্মা বা গঙ্গায় বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও প্রজনন মরসুমে ইলিশ ধরা যায় না। কিন্তু আইনের বাস্তব প্রয়োগ এ রাজ্যে সে ভাবে নেই বললেই চলে। ডিম পাড়া ও বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনে সারা বছর ৯ ইঞ্চির কম দৈর্ঘের ছোট ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি রাজ্যের নদী অঞ্চলের পাঁচটি এলাকাকে ইলিশের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই পাঁচটি এলাকায় জুন থেকে অগস্ট এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশ ধরা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ওই পাঁচটি অঞ্চলের মধ্যে ফরাক্কা ব্যারাজ লাগোয়া পাঁচ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। রাজ্যের ইলিশ সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের এক কর্তা বলেন, ‘‘দু’ বছর বয়সের একটি ইলিশের ওজন হয় প্রায় ১,১০০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক একটি ইলিশ প্রায় ২২ লক্ষ ডিম পাড়ে। তার অর্ধেক ডিম নিষিক্ত হয়। নিষিক্ত ডিমের ১০ শতাংশ ডিম পোনা বাঁচলে এক বছরেই একটি ইলিশ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ছোট ইলিশ পাওয়া যাবে। ওই ছোট ইলিশ না ধরলে এক বছর পর ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের প্রায় ৫৫ হাজার ইলিশ মিলবে।“

মৎস্যজীবী বুধন হালদার বলছেন, “বাংলাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হলেই গত কয়েক বছরে ফরাক্কা লাগোয়া এলাকায় এই পুজোর মরসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মেলে গঙ্গায়। জলের দরে বিকোয় সেই ইলিশ। পদ্মা নদী নিমতিতার আগে মিশেছে গঙ্গায়। সেই পদ্মার বাঁকাপথেই বাংলাদেশ থেকে ইলিশের ঝাঁক ঢোকে ফরাক্কায়। এ বার ওই সময় দুর্গাপুজো। তাই আশা করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে ইলিশ মিলবে গঙ্গায়।”

নদী বিশেষজ্ঞ সূর্যেন্দু দে বলেন, “এই সময় সমুদ্রের নোনা জল থেকে ইলিশ পদ্মা, গঙ্গার মিষ্টি জলে ডিম পাড়তে আসে। ইলিশ পরিষ্কার, মিষ্টি জলে ডিম পাড়ে। কিন্তু পরে ফিরে যায় সাগরে। আপ স্ট্রিমে ইলিশ ১,২০০ থেকে ১,৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। আগে পটনাতেও ইলিশ মিলত। কিন্তু এখন ফরাক্কায় এসে থমকে যায় ইলিশের ঝাঁক, বাঁধের জন্য বাংলাদেশ থেকে ঝাঁক বেঁধে ইলিশ নিমতিতা, ধুলিয়ান হয়ে ঢুকে পড়ে ফরাক্কায় গঙ্গায়। এ বারও সে
সম্ভাবনা যথেষ্ট।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement