Coronavirus Lockdown

রোগী সেজে অ্যাম্বুল্যান্স করে এলাম মুম্বই থেকে

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার কিন্তু কী করে বাড়ি যাব। ট্রেন বন্ধ, প্লেন বন্ধ। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম, অ্যাম্বুল্যান্সে যাব।

Advertisement

শুভঙ্কর সিংহ

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০২:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাধ্যমিকের পরে আর পড়াশোনা এগোয়নি। টানাটানির সংসার। স্কুলে যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি। যুতে গিয়েছিলেম কাজে। বাবা অসুস্থ আমরা চার ভাইবোন, আমিই বড়। বিড়ি বেঁধে কোনও মতে খাবার জুটলেও বাবার ওষুধ কেনার পয়সা জুটত না। ভাইবোনদের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায় সংসারটা দাঁড় করাতে কী করব ভাবছি, এমন সময় মুম্বই প্রবাসী মামা এলেন। মামার হাত ধরেই পাড়ি দিলাম মুম্বই।

Advertisement

মামা সেই থেকে প্রায় সাত বছর ধরে মুম্বইয়ে মামার কাছেই থাকি। সোনার কারিগরের কাজ, থাকি মহাজনের দেওয়া ঘরে। সেখানেই আমরা আট জন মিলে খাওয়াদাওয়া করি। আয়ও মন্দ নয়। আমার পাঠানো টাকায় সংসারটা একটু একটু করে দাঁড়িয়েছে। বাবার চিকিৎসা চলছে। ভাইবোনরা পড়াশোনা করছে। এই অবস্থায় ২৩ মার্চ রাতে জনতা কার্ফু ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী। এ বার লকডাউন। প্রথমটায় অত বুঝিনি। কিন্তু দিন যত এগোতে থাকল বুঝলাম, আবার কালো দিন আসছে।

ছোট্ট একটা ঘরে আট জন থাকি। প্রচণ্ড গরম। বাজারে যাওয়া বন্ধ। চাল, ডাল, আলু, আনাজ সব কিছুর দাম হঠাৎ করে দ্বিগুন হয়ে গেল। আবার ঘোষণা হল দ্বিতীয় দফা লকডাউন। পড়লাম অথৈজলে। মুম্বই শহরের এত লোক কোথায় হারিয়ে গেল। দেশটাকে কোন জাদুকর যেন থামিয়ে দিল। কখনও ভাবিনি গোটা দেশটা এমন থমকে যাবে। সময় যত গড়িয়েছে পরিস্থিতি ততই কঠিন হয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরের বাজার যেতে অটোয় ভাড়া দিতে হয়েছে দ্বিগুন। কখনও তিন গুন। তারপরেও পুলিশের দু-এক ঘা খেয়ে বাজার করা। ভেবে দেখলাম এ ভাবে মাসের পর মাস থাকা সম্ভব নয়। থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।

Advertisement

কিন্তু কী করে বাড়ি যাব। ট্রেন বন্ধ, প্লেন বন্ধ। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম, অ্যাম্বুল্যান্সে যাব। শহরে তখন ওই অ্যাম্বুল্যান্স আর পুলিশের গাড়ি ছাড়া কোন গাড়ি চলছে না। মুর্শিদাবাদের ৪ জন ছিলাম। আর ৪ জন ছিল উত্তর ২৪ পরগনার। যোগাযোগ করা হল একজন চালকের সঙ্গে। এত দূর তারা যেতে চায় না। শেষে এক জন রাজি হলেন প্রায় পুরানো একটি গাড়ির দামে। একজন অ্যাম্বুল্যান্সের বেডে রোগী সেজে শুয়ে দু’জন রোগীর আত্মীয় আর আমি গাড়ির খালাসি। বাড়ি আসব এই আনন্দে রাস্তায় যে খেতে হবে এ কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। খিদে যখন পেয়েছে তখন আর কিছু করার নেই। রাত না খেয়ে কেটেছে। খাবার জন্য গাড়ি থামিয়ে সময় নষ্ট করতে চাইছিলাম না আমরা কেউই। কোথাও কোন ধাবা বা খাবার দোকান খোলা নেই। রাস্তায় পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স দেখে কোথাও ছেড়ে দিয়েছে, আবার কোথাও দাঁড় করিয়ে দেখে নিয়েছে কাগজপত্র। যা সামাল দেওয়ার আমাদের চালই দিয়েছেন, তিনি আমাদের কথা বলতে বারন করে দিয়েছিলেন। তিন দিন কলা পাউরুটি খেয়ে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি আসার সময় ভাবছিলাম আর ভিন রাজ্যে কাজের জন্য যাব না। কিন্তু এখন দেখছি তা আর হবে না। কি কাজ করব মুর্শিদাবাদে, বিড়ি ছাড়া তো আর কোনও শিল্প নাই। আয়ও বেশি নয়। তাই লকডাউন শেষ হলে আবার ফিরে যাব মুম্বই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement