তলিয়ে গেল বাম-কংগ্রেস জোট

সিপিএমের অনেকেই মনে করছেন, বিজেপিকে হারাতে জোটের সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ চলে গিয়েছে তৃণমূলে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০৪
Share:

সিপিএম প্রার্থী গোলাম রাব্বি। (পরাজিত)

যে গ্রামে বুথের সামনে লাথি খেয়ে ঝোপে পড়ে গিয়েছিলেন বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদার, সেই ঘিয়াঘাটার রাস্তার পাশে ছোট্ট মুদির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গাঁয়ের সেন্টু মণ্ডল বললেন, “আমি কংগ্রেস করতাম। এ বার বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছি।”

Advertisement

সেন্টু চাষবাস করেন। তাঁর মাথায় ঘুরছে এনআরসি। তাঁর একটাই শুধু চাওয়া, বিজেপি হারুক। আর সেই কারণেই তিনি চেয়েছেন, বিজেপি-বিরোধী ভোট যেন ভাগ না-হয়ে যায়।

সেন্টুর কথাতেই আভাস মেলে, কী কারণে এ বার বাম-কংগ্রেস জোটের ভোট তলানিতে এসে ঠেকেছে। কী ভাবে গত লোকসভা ভোটের থেকেও উপনির্বাচনে ভোট বাড়িয়ে বিজেপিকে আটকে দিয়েছে তৃণমূল। সিপিএমের অনেকেই মনে করছেন, বিজেপিকে হারাতে জোটের সংখ্যালঘু ভোটের একটা অংশ চলে গিয়েছে তৃণমূলে। বিশেষ করে কংগ্রেসের ভোটারদের একটা বড় অংশ। গোলাম রাব্বি মুসলিম হওয়ায় সিপিএমের সংখ্যালঘু ভোট বড় জোর কিছুটা ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছেন। এই চিন্তা যে একেবারে অমূলক নয়, তা বোঝা যায় ফলের দিকে চোখ রাখলেই। লোকসভা ভোটে সিপিএম পেয়েছিল প্রায় ১৮ হাজার ভোট। আর কংগ্রেস ২২ হাজারের মতো। এ বার সেখানে জোটপ্রার্থী পেয়েছেন মোটে প্রায় ১৮ হাজার ভোট। সেন্টু মণ্ডলের মতো কংগ্রেসের ভোটারেরা তৃণমূলের দিকে ঢলে পড়েছেন। প্রাথমিক ভাবে জোটের নেতাদের অনেকেরই মনে হচ্ছে, সংখ্যালঘু ভোট কিছুটা বামেদের সঙ্গে থাকলেও হিন্দু ভোট বেশির ভাগটাই তাদের হাতছাড়া।

Advertisement

বিজোট প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন প্রায় পুরোদস্তুর সংখ্যালঘু এলাকা নতিডাঙা ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। করিমপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা, যেখানে হিন্দু ভোটার বেশি, সেখানে তারা প্রায় ধূলিসাৎ। অর্থাৎ জোটের মুসলিম ভোটের একটা অংশ যদি তৃণমূলের দিকে সরে গিয়ে থাকে, হিন্দু ভোটের বেশিটাই গিয়েছে বিজেপির দিকে। আর সেই কারণেই হারলেও গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ভোট বেড়েছে বিজেপির। তবে করিমপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতের মতো হিন্দুপ্রধান এলাকায় লোকসভা ভোটের চেয়ে অনেকটাই খারাপ। স্থানীয় তৃণমূল ও জোটের নেতাদের ব্যাখ্যা, করিমপুরের এই বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় একটা বড় অংশে ও পার বাংলা থেকে আসা মানুষের বাস। এনআরসি নিয়ে শুধু মুসলিমেরা নন, তাঁদেরও একাংশ আতঙ্কিত। যেমন করিমপুর ১ ব্লকের মুরুটিয়া বা পিপুলবেড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ পূর্ববঙ্গ থেকে আসা। তাঁরাও বিজেপির পাশ থেকে সরে গিয়েছেন। উল্টে সমর্থন করেছেন তৃণমূলকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিজেপি নেতারাও একই কথা বলছেন।

বিজেপির শীর্ষ নেতারা কি এ থেকে শিক্ষা নেবেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement