সেই আম গোছানোয় ব্যস্ত গৌতম ভৌমিক। নিজস্ব চিত্র।
বাম হাতের পাঁচ আঙুলের ঘেরাটোপে ধরা তিনখানি আম। তীক্ষ্ণ চোখে এমন ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলেন গৌতম ভৌমিক, যেন মূল্যবান অলঙ্কার। মনঃপূত হতেই সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে সে আমের ঠাঁই হল বিশেষ এক বাক্সে।
এ ভাবেই গত কয়েক দিন ধরে বাছা হয়েছে দু’হাজার কেজি আম। যার গন্তব্য দিল্লির জনপথ রোড। ১৬ জুন থেকে সেখানে শুরু হচ্ছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আম উৎসব। সেখানে ডাক পেয়েছেন শান্তিপুরের গৌতম ভৌমিক। যাঁকে হিমসাগর আমের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ বলা চলে।
আম বাঙালি মাত্রেই জানেন, কাশীর ‘ল্যাংড়া’, মালদহের ‘ফজলি’ আমের সঙ্গে একযোগে উচ্চারিত হয় শান্তিপুরের ‘হিমসাগর’-এর নাম। যেমন আম রসিকেরা আরও জানেন, মুর্শিদাবাদ হরেকরকম নবাবি আম এবং চন্দননগর ‘সরিখাস’-এর খাসতালুক। দুই বছর বন্ধ থাকার পর রাজ্য সরকারের আয়োজনে এ বার ফের দিল্লির হ্যান্ডলুম হাটে বসছে আম উৎসব। অংশ নিচ্ছে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়া। মালদহ ছাড়া সব জেলা থেকে এক জন করে প্রতিনিধি তাঁদের সংগ্রহের শ্রেষ্ঠ আমগুলি নিয়ে যাবেন। মালদহ থেকে যাবেন দু’ জন।
নদিয়া থেকে এ বার একমাত্র যাচ্ছেন গৌতম। তিনি বলেন, “বেশ কয়েক বছর ধরে আমি এই ধরনের উৎসবে মূলত হিমসাগর আম নিয়ে যাই। কেননা, এটা সকলেই জানেন নদিয়ার শান্তিপুরের মতো উৎকৃষ্ট মানের হিমসাগর আর কোথাও হয় না। ফলে, যেখানেই গত সাত-আট বছর ধরে গিয়েছি, শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা আর কেউ নিতে পারেনি। সেই ভাবে এবারেও দিল্লি যাচ্ছি।”
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে মেলার সূচনা হচ্ছে। প্রথম বারের জন্য দু’হাজার কেজি আম নিয়ে ইতিমধ্যে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন গৌতম। তিনি মোট পাঁচ রকমের আম নিয়ে গিয়েছেন। হিমসাগরই বেশি। তা ছাড়াও ল্যাংড়া, গোলাপখাস, মল্লিকা এবং আম্রপালি আছে সঙ্গে। স্বাদে অতুলনীয় শান্তিপুরের হিমসাগরের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ প্রসঙ্গে গৌতম বলেন, “অনেকেই জানেন না, তাঁতের পাশাপাশি আমও কিন্তু শান্তিপুরের অর্থনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শান্তিপুরে প্রায় হাজার একর জমিতে আমের ফলন হয়। প্রধানত, মাটির কারণে এখানে হিমসাগর এত ভাল হয়। সেই সঙ্গে আমাদের বছরভর পরিচর্যা চলে।”
নিজের প্রায় ৩৫০ গাছের মধ্যে থেকে বাছাই করে নিয়ে গিয়েছেন আম। মূলত, বাবলা অঞ্চলের বাগানের গাছ থেকে গিয়েছে প্রথম পর্যায়ের আম। আগামী ২২ জুন দিল্লি যাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আম।
দিল্লির শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত হ্যান্ডলুম হাট সেজে উঠছে রকমারি আমে। সারি সারি ডালায় সাজানো গাছপাকা হিমসাগর, গোলাপখাস, ফজলি, মিঠুয়া, মধুকুলকুলি, আম্রপালি, মিছরিখাস, চ্যাটাজি, লালমনি, ল্যাংড়ার মতো নানান ‘কুলিন’ জাতের আম। গাছ থেকে ক’দিন আগে ছিঁড়ে আনা সে সব আমের গা দিয়ে আঠা না গড়ালেও আমের গন্ধে এখন রাজধানী ম-ম।
গৌতমের স্থির বিশ্বাস, এ বারও অদ্বৈতধামের হিমসাগর সবাইকে টেক্কা দেবে।