প্রতীকী চিত্র
বছর চারেক আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় দু’টি পা হারিয়ে ছিলেন। এখন বিড়ি বেঁধে সংসার চলে। তবে রক্তদান শিবির হচ্ছে শুনে বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি দক্ষিণ গাজিনগরের মহম্মদ আয়াতুল্লা। অশক্ত শরীরেও মঙ্গলবার রক্ত দান করেন তিনি।
শুধু তিনিই নন, তাঁর মতো আরও ৬১০ জন শিবিরে রক্ত দান করেছেন, যাঁদের মধ্যে ২৫ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী। বিড়ি শ্রমিকদের বসতি বলে পরিচিত শমসেরগঞ্জে রক্তদানের এমন হার দেখে অবাক স্বাস্থ্য দফতরও।
জেলার অন্যতম পিছিয়ে পড়া একটা এলাকায় রক্তদান শিবিরে এ ভাবে ভিড় হবে, আন্দাজ করেননি আয়োজকরাও। উদ্যোক্তা আব্দুল হামিদ বললেন, “আসলে হাসপাতালে গিয়ে কোনও না কোনও সময় রক্তের সঙ্কটে পড়েছেন, এমন অনেকেই এই এলাকায় থাকেন। তাঁদের সহজে বোঝানো গিয়েছে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তার কথা। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এসেছেন শিবিরে। ৬২ জন মহিলাও আসেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল পাঁচশো জন রক্তদাতা জোগাড় করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাতার সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৬১০-এ।’’ রক্ত সংগ্রহ করতে এসেছিলেন জেলার দু’টি ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাদের অন্যতম জঙ্গিপুর ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মিতা রায় বলেন, “পিছিয়ে থাকা একটা ব্লকে রক্তদানের উৎসাহ দেখে আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছি।’’
রক্ত দিতে আসা আয়াতুল্লা বললেন, “আমার দু’টো পা যখন কাটা পড়েছিল, তখন এলাকার বহু মানুষ রক্ত দিয়ে আমায় বাঁচিয়ে তোলেন। সেই ঋণ ভুলি কী করে! রক্ত দান করা যে কত জরুরি, আমার চেয়ে ভাল আর কে বোঝে। এখানে শিবির হচ্ছে জেনে তাই চলে এসেছি স্ত্রীকে নিয়ে।’’ রফিকুল ইসলাম নামে এক রক্তদাতার দাবি, ‘‘২০ বছর বয়স থেকে রক্ত দিচ্ছি। বছরে তিন বার করে। এ নিয়ে ৬০ বার রক্তদান করা হয়ে গেল।’’
শমসেরগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন বললেন, “ওই শিবিরে আমি দীর্ঘক্ষণ উপস্থিত ছিলাম। বাড়ির মহিলারা গৃহস্থালির কাজ ফেলে রক্ত দিতে এসেছিলেন। এমন সচরাচর দেখা যায় না।’’