ডোমকলের রাস্তায় ছুটন্ত খাট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বেলা বাড়তেই প্রচণ্ড গরম। সন্ধ্যা থেকে খানিক স্বস্তি। তেমনই এক সন্ধ্যায় ভৈরব নদীর পারে প্রেমিকার সঙ্গে বসেছিলেন ডোমকলের নবাব, নবাব শেখ। মৃদুমন্দ হাওয়া, মাথার উপরে চাঁদ। এমন মনোরম পরিবেশে প্রেমিকা বলে বসেন, ‘‘যদি একটা খাট থাকত, এখানেই ঘুমিয়ে যেতাম।’’ প্রেমিকার ওই আফসোস দাগ কেটেছিল নবাবের মনে। বাড়ি ফিরে আন্তর্জাল ঘেঁটে চলমান খাট তৈরি সম্পর্কে শুরু করেন পড়াশোনা, তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রেমিকাকে চমকে দেওয়া এবং নতুন কিছু করার ইচ্ছা থেকে তার পর তিনি এমন এক খাট বানিয়েছেন, যার জন্য যানজট মুর্শিদাবাদের রাস্তায়। গাড়ি-বাইককে পাশ কাটিয়ে ছুটে চলেছে খাট— এ দৃশ্য দেখতে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে পড়ছেন কৌতূহলীরা। কিন্তু ‘নবাবি খাটে’ চড়ে ভিডিয়ো বানানোর ধুমে সমস্যায় প্রশাসন। শেষে পুলিশের অনুরোধে ঘরে ফিরেছেন মুর্শিদাবাদের চলমান নবাবি খাটের মালিক। হাঁপ ছেড়েছে প্রশাসন।
ব্যাপার কী?
নকশা করা খাটে লাগানো চাকা। খাটে তোশক, চাদর, বালিশ দিয়ে আরামের সুন্দর বন্দোবস্ত। কিন্তু ওই খাট ঘরে থাকে না। রাস্তায় ছুটে বেড়ায়। চলমান খাটকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য লাগানো হয়েছে স্টিয়ারিং। এই খাটের মালিক নবাবের দাবি, ২ বছরের চেষ্টায় তিনি এই ভ্রাম্যমান খাট বানিয়েছেন। ইদের ছুটি থেকে ওই খাট ধারে নিয়ে একের পর এক যুবক ‘রিল’ তৈরি করেছেন। তার পর সমাজমাধ্যমে ভাইরাল ‘ছুটন্ত খাট।’ ডোমকল মহকুমার একাধিক রাস্তায় দিনভর ছোটার পর আপাতত বিশ্রামে অদ্ভুত যান।
মঙ্গলবার ডোমকলের রানিনগর, শেখপাড়া, গোধনপাড়া, কাহারপাড়া, রাইপুর এলাকায় খাটটিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন অনেকে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, ভিড় রাস্তায় ছুটে চলেছে প্রমাণ সাইজ়ের খাট। খাটের দু’দিকে রয়েছে দু’টি ‘লুকিং গ্লাস’, আর ‘গাড়ি’র আসনে গদি-তোশক। সেই খাটের উপর আয়েশ করে বসে (কখনও কখনও দাঁড়িয়ে) বিভিন্ন রকম ভঙ্গিতে পোজ় দিচ্ছেন এক যুবক। মাঝেমধ্যে তিনিই বসে পড়ছেন স্টিয়ারিংয়ে। নিয়ন্ত্রণ করছেন খাটের গতি। নবাব জানাচ্ছেন, খাটটিকে চলমান করতে ব্যবহার করেছেন ৮০০ সিসির একটি ইঞ্জিন। তাঁর দাবি, ‘‘এটি একটি প্রোটোটাইপ। মানুষের ভাল লাগে কি না বুঝতে ইদের দিন রাস্তায় নামিয়েছিলাম। কাজ শেষ করতে আরও কয়েক মাস লাগবে।’’
কী ভাবে এবং কেন এমন অদ্ভুত যান তৈরি করলেন? লাজুক স্বরে ডোমকলের নবাবের জবাব, ‘‘নদীর পারে সন্ধ্যায় বসেছিলাম। প্রেমিকা বলল, ‘এত সুন্দর পরিবেশ, খাট থাকলে এখানেই ঘুমোতাম। এনে তো দিতে পারবি না? পারবি কি আমার জন্য?’ সেটাই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিলাম। ওর আবদার বলে কথা। তাই বানিয়েই ফেললাম।’’