— প্রতীকী চিত্র।
সোনার কয়েন দেওয়া হবে! ফোন করে এমনই জানানো হয়। সেই টোপে পা দিয়ে কলকাতা থেকে এক ব্যক্তি চলে যান বর্ধমানে। তিনি বুঝতে পারেননি যে প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছেন। প্রতারকদের সঙ্গে দর কষাকষির পর ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কিছু কয়েন কেনেন। পরে জানতে পারেন, সব ক’টি কয়েনই জাল! সেই ঘটনার তদন্তে নেমে প্রতারণা চক্রের দুই মাথাকে ফাঁদ পেতে ধরল বর্ধমান থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের নাম শেখ ইলিয়াস ওরফে ইল্লু এবং আজিজ মল্লিক ওরফে মুন্না। প্রথম জনের বাড়ি বর্ধমান থানার কৃষ্ণপুরে পশ্চিমপাড়ায়, দ্বিতীয় জনের বাড়ি খণ্ডঘোষ থানার কমলপুরের খালাপাড়ায়। শনিবার দুপুরে প্রতারকদের ধরতে ফাঁদ পাতে পুলিশ। অভিযুক্তদের ডেকে পাঠানো হয় শহরের মিরছোবা এলাকার একটি নির্জন জায়গায়। তাঁরা বুঝতে পারেননি খদ্দের সেজে পুলিশই জাল বিছিয়েছে। নতুন খদ্দের পাওয়ার লোভে হাজির হয় পুলিশের বলা জায়গায়। তাঁরা পৌঁছতেই পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেলে। পুলিশ সূত্রে দাবি, ধৃতেরা প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। ধৃতদের রবিবার বর্ধমান সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। শনাক্তকরণের জন্য তাঁদের টিআই প্যারেড করাতে আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম। ধৃতদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কী ভাবে প্রতারণার ছক কষেছিল প্রতারকেরা? পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ২৫ অগস্ট কলকাতার বাসিন্দা নিশীথকুমার মাজি থানায় অভিযোগ দায়ের করে প্রতারণার কথা জানান। তাঁর অভিযোগ, গত বছরের জুলাই মাসে একটি অজানা নম্বর থেকে তিনি ফোন পান। রাজীব দাস পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাঁকে জানান, তিনি বীরভূমের বোলপুরের বাসিন্দা। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। তবে পাশাপাশি শ্রমিক সরবরাহ করে থাকেন। তাঁর কাছ কয়েকটি সোনার কয়েন রয়েছে। টাকার প্রয়োজন তাঁর। তাই সেগুলি বিক্রি করতে চান। নিশীথকে ডেকে পাঠান বর্ধমানে। সেই মতো তিনি বর্ধমানে গেলে তাঁকে একটি কয়েন দেন। সেই কয়েনটি সোনার ছিল। রাজীব বলে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি জানান, তাঁর কাছে আরও কয়েকটি এমন কয়েন রয়েছে। সেখানে শুধু তিনি একা ছিলেন না, আরও এক জন ছিলেন। ঠিক হয় ১০ লক্ষের বিনিময়ে সব কয়েন বিক্রি করা হবে। নিশীথ জানান, ওই মুহুর্তে তাঁর কাছে অত টাকা নেই। জোগাড় করতে সময় লাগবে। কিন্তু প্রতারকেরা নাছোড়বান্দা ছিল। শেষে নিশীথ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কয়েনগুলি কিনে কলকাতায় ফিরে যান। পরে পরীক্ষা করে জানতে পারেন, সব ক’টা কয়েনই জাল। তার পরই পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে সাফল্য পেল বর্ধমান থানার পুলিশ। দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও এই প্রতারণা চক্রে আর কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।