ধৃত আনারুল শেখ।
আরও একটা দিন পেরিয়ে গেল। কিন্তু এক অভিযুক্তের সঙ্গে নাম এক হওয়ায় পুলিশের ‘ভুলে’ জেলে বন্দি আনারুল শেখের ছাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা হল না।
পুলিশের যে অফিসার তাকে ধরে এনেছিলেন, যিনি কেস ডায়েরি লিখে তাকে আদালতে চালান দিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তার সদুত্তর মিলল না।
তবে গোলমালটা যে সুবিধের নয়, তা বোধহয় কিছুটা মাথায় ঢুকেছে পুলিশের। যে কারণে আনারুলের বাড়ির লোকেদের বুধবার লালগোলা থানায় ডাকিয়ে এনে কথাবার্তা বলা হয়। পুলিশ তাঁদের ‘পাশে আছে’, আনারুলকে যে দিন আদালতে তোলা হবে, সেই ২২ অগস্ট তাঁদেরও গাড়িতে করে পৌঁছে দেওয়া হবে— এই সব আশ্বাসও দেওয়া হয়।
মঙ্গলবারই আনারুলের স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা বহরমপুরে এসেছিলেন জেলার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাতে। কিন্তু সুপারের দেখা পাননি। অভিযোগপত্র জমা দিয়ে তাঁরা ফিরে যান। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাওয়া হলে পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার রাত পর্যন্ত ফোন ধরেননি, এসএমএসের জবাব দেননি।
আনারুল শেখের বাড়ি রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকার বড়জুমলা গ্রামে। যে আনারুলকে পুলিশ খুঁজছিল, তার বাড়িও সেখানেই। কিন্তু সে ইদানীং হাওড়ায় থাকে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় চুরি ও ৪১৩ ধারায় পেশাদার চোরের মামলা রুজু করেছিল হাওড়া থানার পুলিশ। সে পলাতক। হাওড়া সিজেএম আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ২২ অগস্টের মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু রঘুনাথগঞ্জের বদলে লালগোলা থানার কাছে সেই নির্দেশ চলে আসে।
তার পরেই গত ১২ অগস্ট রাতে লালগোলা থানার পুলিশ আনারুল শেখ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। পর দিন লালবাগ এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে তাঁকে আট দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আনারুলের আইনজীবী মোতাহার হোসেন রিপনের দাবি, হাওড়া আদালত থেকে ‘ভুল করে’ রঘুনাথগঞ্জ থানার বদলে লালগোলা থানায় খবর দেওয়া হয়েছিল। তারা তা শুধরে দেওয়ার বদলে উল্টে ভুল লোককে ধরে আনে। ভুল করার কথা ছিল না। কেননা দুই আনারুলের বাবার নাম আলাদা। যাকে খোঁজা হচ্ছে, তার বাবার নাম বাশেদ শেখ। আর যাঁকে ধরে আনা হয়েছে তাঁর বাবার নাম বশির শেখ। দ্বিতীয় জনের স্ত্রী কাশ্মীরা বিবির অভিযোগ, ‘‘শ্বশুরের নাম বশির শেখ জানিয়ে ভোটার কার্ডও বের করে পুলিশকে দেখাই। কিন্তু পুলিশ খাটের উপরে ভোটার কার্ড ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়।’’ আনারুলের মা সাদেকা বেওয়ার আক্ষেপ, ‘‘এত করে বললাম, ছেলে দিনমজুরি করে খেটে খায়। তার নামে কোনও মামলা নেই। পুলিশের হাতে-পায়ে ধরেছি যাতে ছেলেকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ কোনও কথা শোনেনি।’’
কেন পুলিশ বাড়ির লোকের কথায় কান দিল না? ভোটার কার্ডের মতো প্রামাণ্য পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও কর্ণপাত করল না?আনারুলের আইনজীবীর দাবি, সে রাতে বিকাশ গুপ্ত নামে সশস্ত্র পুলিশের এক এএসআই আনারুলকে ধরে এনেছিলেন। কিন্তু কেস ডায়েরি লিখে তাঁকে আদালতে চালান করার এক্তিয়ার তাঁর না থাকায় লালগোলা থানার এএসআই কপিলপদ মণ্ডল নথিতে সই-সাবুদ করেন। বিকাশ এ দিন কোনও কথা বলতে চাননি। কোন যুক্তিতে তিনি আনারুলকে তুলে এনেছিলেন তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বারবার শুধু বলেন, ‘‘আমায় কিচ্ছু জিগ্যেস করবেন না। যা বলার, পুলিশ সুপার বলবেন।’’
বহু চেষ্টা করেও কপিলপদর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। লালগোলা থানার ওসি পিন্টু মুখোপাধ্যায় এ দিন আর ফোন ধরেননি। পুলিশ সুপারকে ফোন করলে তিনি কেটে দেন। ফলে দোষী অফিসারদের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তারও সদুত্তর মেলেনি।