সঞ্জয় প্রামাণিকের তৈরি সেই গাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
সস্তায় দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে দেন তিনি। গাড়ি কিনতে যেতে হয় শোরুমে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে তবে হয় সুখের সফর। তবে, মাত্র হাজার দশেক টাকায় চারচাকা গাড়ি তৈরি করেন নদিয়ার শান্তিপুরের বৈষ্ণবপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় প্রামাণিক।
সঞ্জয় পেশায় মণ্ডপসজ্জার শ্রমিক। আর নেশা অসাধ্যসাধন করা। লকডাউনের সময় তাঁর ছোট ভাইপো বায়না ধরেছিল গাড়ির। কিন্তু, অভাবের সংসারে গাড়ি কেনা মুখের কথা নয়। ঘরেতে টাকার অভাব থাকলেও উদ্ভাবনী ক্ষমতার অভাব নেই। তাই সেই সময় ঘরে বসে বিভিন্ন বাতিল জিনিপত্র কুড়িয়েবাড়িয়ে তিনি তৈরি করে ফেলেছিলেন আস্ত গাড়ি। যিনি সেই গাড়ি চালাবেন তিনিই একমাত্র যাত্রী। তাই কাব্য করে সেই গাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘আমি একা’। ব্যক্তিজীবনেও একা সঞ্জয়। তিনি অবিবাহিত। প্রথম তৈরি করা সেই গাড়িতে শুধু মাত্র ছিল চালকের আসন। নয়া মডেলে অবশ্য রয়েছে আকর্ষণীয় সব সুবিধা। চালকের পাশে একটি আসন বেড়েছে। রয়েছে হেডলাইট, ইন্ডিকেটর, হর্ন, ব্যাক গিয়ার মিউজিক, গান শোনার ব্যবস্থা, মায় জলের বোতল এবং লাগেজ রাখার ব্যবস্থাও। এত কিছু পাওয়া যাবে মাত্র ১০ হাজার টাকায়।
তবে গাড়ির ব্যাটারি এবং মোটরের খরচ আলাদা। সঞ্জয় বলেন, ‘‘এ বারের গাড়িটি মূলত এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কলেজ পড়ুয়ার বরাত অনুযায়ী বানানো হয়েছে। তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার আগে আমি নিজে এক বার ট্রায়াল দিয়ে দেখে নিলাম।’’ তাঁর দাবি, ওই গাড়ি নিরাপদ এবং চড়া যাবে অনায়াসেই। সঞ্জয়ের গাড়ি দেখে ঘুরে তাকাননি এমন লোক শান্তিপুরে পাওয়া ভার। অনেকে সেলফিও তুলে নেন গাড়ি এবং সঞ্জয়ের সঙ্গে। এ ছাড়াও সঞ্জয়ের ভিন্ন নেশাও আছে। তিনি বিভিন্ন গাছের শিকড় থেকে তৈরি করেন ভাস্কর্য। ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছের শিকড়ের অংশ দিয়ে ঘর সাজানোর নানা শৌখিন জিনিস তৈরি করেন তিনি। আর সেই সব সাজিয়ে রাখেন নিজের ঘরে।