মঞ্চ বাঁধা চলছে। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা বা রাজনৈতিক সভা রানাঘাটে নতুন নয়। তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে মতুয়া গড়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই আসন্ন প্রশাসনিক বৈঠক ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। মতুয়াদের উদ্দেশে নতুন কোনও বার্তা সেখানে তিনি দেবেন কিনা, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
নদিয়ার দক্ষিণাংশের একটা বড় এলাকা মতুয়া অধ্যুষিত। মতুয়া মন পেতে অনেক আগে থেকেই লড়াই রয়েছে তৃণমূল ও পদ্ম শিবিরের মধ্যে। সেই দক্ষিণেরই হবিবপুরে ছাতিমতলার মাঠে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। এখানে এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক সভা যেমন করেছেন তেমনই নির্বাচনী প্রচারে এসে রাজনৈতিক সভাও করেছেন।
দক্ষিণে কৃষ্ণগঞ্জ, রানাঘাট উত্তর-পূর্ব, রানাঘাট-দক্ষিণ, চাকদহ, কল্যাণীর একাধিক বিধানসভা মতুয়া-অধ্যুষিত। লোকসভা ভোটের সময় থেকেই জেলার এই দক্ষিণে উত্থান হয় বিজেপির। লোকসভা আসন জয়ের পাশাপাশি বিধানসভা ভোটেও এখানে সব আসনেই জয়ী হয় তারা। পরে উপ-নির্বাচনে শান্তিপুর পুনরুদ্ধার করে তৃণমূল। আবার সাম্প্রতিক পুরভোটে ধাক্কা খেয়েছে গেরুয়া শিবির। দক্ষিণে শুধুমাত্র চারটি ওয়ার্ডে জিতেছে বিজেপি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই এলাকায় নিজেদের জমি পুরোপুরি উদ্ধারের লড়াই যেমন শাসকদলের তেমনই জমি পুনরুদ্ধারের লড়াই গেরুয়া শিবিরের। মতুয়া ভোট এখানে একটি বড় নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে মতুয়া-মন পেতে সব দলই ঝাঁপাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এর আগে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি, হরিচাঁদের জন্ম তিথিতে সরকারি ছুটি, মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদের মতো একাধিক পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। উল্টোদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের থেকেও অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ। এ বারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের জন্য নতুন কিছু বলেন কিনা তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে প্রায় সব মহলেই।
তৃণমূল-পন্থী মতুয়া সংগঠনের জেলা সভাপতি তথা তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান প্রমথরঞ্জন বোস বলেন, ‘‘বুধবারের সভায় মতুয়াদের বড় উপস্থিতি থাকবে। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের জন্য একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এ বার তিনি কী বার্তা দেন, সে দিকে আমরা তাকিয়ে।’’
আবার বিজেপি-পন্থী মতুয়া সংগঠনের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমনি অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বলছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে রয়েছেন তাঁরা এ দেশের নাগরিক। কিন্তু সরকারি কোনও কাজের জন্য নথির বিষয়ে সরকারি দফতরে সমস্যা হচ্ছে মতুয়া ও শরণার্থীদের। ১৯৭১-এর আগের দলিল চাইছে কেন তা হলে? দ্বিচারিতা হচ্ছে। মতুয়াদের উপর ভর করে তিনি ক্ষমতায় এসে এখন তাঁদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। এটা বেশি দিন চলবে না।’’