ফাইল চিত্র।
জেলা পরিচালনা ও উন্নয়নে তৃণমূলের চার নেতার পরামর্শ নিতে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চার নেতার নামও জানিয়ে দেন তিনি। তাঁরা হলেন আবু তাহের, জাকির হোসেন, খলিলুর রহমান ও অপূর্ব সরকার।
কেন এই চার নেতার কথা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী তার ব্যাখ্যাও দেন। বলেন, ‘‘তাঁরা মুর্শিদাবাদ জেলাটাকে ভাল করে চেনেন। তাই কখনও কখনও এদের সঙ্গে কথা বলে নেবেন বা পরামর্শ করে নেবেন।’’
এ দিন জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী ভার্চুয়াল বৈঠকে সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে “ঠিক আছে’’ বলে জানিয়ে তা মেনে চলার আশ্বাসও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত, কারও চুরির দায়িত্ব সরকার বা দল নেবে না, তা সে যেই হোক না কেন।
বুধবার দুপুরে কলকাতার নবান্ন থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই নদিয়া জেলার পর মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয় মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে।
বহরমপুরে জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদীর সঙ্গে হাজির ছিলেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমারও। রঘুনাথগঞ্জে নিজের অফিসে ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন সমস্ত কথাবার্তায় হয়েছে মূলত জেলা শাসকের সঙ্গেই। দুই পুলিশ সুপারের কেউই এ দিনের বৈঠকে মুখ খোলেননি।
জেলা শাসকের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে “সব ঠিক আছে” কি না জেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে মুর্শিদাবাদবাসীর প্রশংসাও করেন তিনি। বলেন, “ওখানে (জেলায়) একটা টেন্ডেন্সি আছে কখনও কখনও ...। তবে ওরা কিন্তু কখনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেনি, এটাই ওদের ক্রেডিট। এটা ওদের একটা ট্রাডিশন রয়েছে। ওখানে কিন্তু সাম্প্রয়ায়িক অশান্তিকে কেউ প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু করতে কত ক্ষণ?”
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, “ওখানে (জেলায় ) লক্ষ্য রাখতে হবে নাকা চেকিং-এ। আগ্নেয়াস্ত্র যাতে কেউ বিহার থেকে না নিয়ে আসতে পারে। এখন কিন্তু মাত্র ২০০০ টাকায় বন্দুক দিয়েও কাউকে মেরে দেয়। আর যে খুনি, তার বদলে আর একজন (জেল) খাটে। এ সব সিনেমায় দেখায়। কিন্তু এখন তো দেখছি বাস্তবেও হচ্ছে। কাজেই চোখ, কান খোলা রেখে প্রশাসনের কাজ করা দরকার। আইপিএস, আইএএস, ডব্লুবিসিএস তাঁদের কাজও ভাল করে করতে হবে। দৈনিক ভিজ়িট করা দরকার। ভিজ়িট করলে অনেক কিছু ক্লিয়ার হয়ে যায়।’’
এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজই কান্দির অপূর্ব একটি চিঠি পাঠিয়েছে আমাকে। সম্ভবত কান্দি পুরসভা নিয়ে। আর্বান বিভাগ থেকে একটি নির্দেশ গিয়েছে তাদের কাছে কোন কোন ব্যাঙ্ক থেকে ওরা ঋণ নিতে পারে বা সাহায্য নিতে পারে। তার সঙ্গে কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্কের নামও রয়েছে। এটা ঠিক কি না সে ব্যাপারে খবর নিয়ে তা ক্ল্যারিফাই করে দিতে হবে” বলেও নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সরাসরি বলেন, “জেলা পরিষদ যেন ভাল কাজ করে। পঞ্চায়েত যাতে ভাল কাজ করে। কারও চুরির দায়িত্ব কিন্তু আমরা নেব না, সে যেই হোক। এটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। হাসপাতালগুলো যাতে ভাল করে চলে। শমসেরগঞ্জে একটি বিড়ি হাসপাতালকে আমরা ডেভেলপ করে দিচ্ছি। আমাদেরই (রাজ্য সরকারের) হাসপাতালকে বিড়ি হাসপাতাল হিসেবে কনভার্ট করে আরও উন্নত করে দিচ্ছি, কারণ সেখানে অনেক বিড়ি শ্রমিক রয়েছেন।” এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের চার সাংসদ ও বিধায়কের নাম উল্লেখ করে জেলা শাসককে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই এ দিন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, “শমসেরগঞ্জে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল চালুর জন্য নিমতিতা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কথা ভাবে হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা শাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে আমর কথাও হয়েছে। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। ঘর যা রয়েছে তা সংস্কার করে উন্নত পরিকাঠামো তৈরি করে তা চালু করলে বিড়ি শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকেরা যথেষ্ট উপকৃত হবে।”