মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে সদর শহর থেকে তিনি ‘লিড’ পাননি। এ বার মহুয়া মৈত্রের রোষের মুখে পড়তে হল কৃষ্ণনগরের তৃণমূল নেতৃত্বকে। কৃষ্ণনগর পুরসভায় বড়সড় রদবদলের ঘোষণাও করে দিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ তথা সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী মহুয়া। অনেকের ধারণা, এই ঘোষণা আসলে পুরপ্রধান পরিবর্তনের ইঙ্গিত। ভোটের নিরিখে পিছিয়ে থাকা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতেও নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে বলে মহুয়া জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর রবীন্দ্র ভবনে ২১ জুলাই, তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’-এর প্রস্তুতি সভায় মহুয়া প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ভোটের ফলাফলের পর্যালোচনা করেন। আর সেটা করতে গিয়েই তিনি কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের নেতৃত্বের প্রতি সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই কেন্দ্রের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। প্রায় ২৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকতে হয়েছে তৃণমূলকে। সে কথা তুলে মহুয়া এ দিন নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথাও ঘোষণা করেন।
এ বার কৃষ্ণনগর শহরে ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র একটিতে ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। পুর এলাকায় প্রায় ২৮ হাজার ভোটে বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে থেকেছে তারা। মহুয়ার আক্ষেপ, পুরপ্রতিনিধিরা নিজেরা জেতেন কিন্তু দলের জন্য কোনও দায়বদ্ধতা দেখান না। কৃষ্ণনগরে সকলে নিজেদের মধ্যে লড়তে ব্যস্ত, ভোট করারই লোক নেই। মহুয়া জানান, খুব তাড়াতাড়ি কৃষ্ণনগর পুরসভায় বড়সড় পরিবর্তন হতে চলেছে। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনটা জানিয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
কৃষ্ণনগরে গোষ্ঠী কোন্দলের জন্য এ দিন প্রায় সরাসরি পুরপ্রধান রিতা দাসকে নিশানা করছেন মহুয়া। তাঁর মতে, পুরসভা ঘুঘুর বাসা হয়ে আছে, যার যা ইচ্ছা তাই করছে, কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের আগে ফের জেলা সভানেত্রী পদ ফিরে পাওয়ার পরেই মহুয়া প্রকাশ্য সভায় রিতা দাসকে কার্যত ভৎসনা করেছিলেন। যা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছিল রাজ্য নেতৃত্বও। এ দিন পুরপ্রধান অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কৃষ্ণনগর উত্তরের পাশাপাশি কৃষ্ণনগর দক্ষিণ ও কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের নেতাদেরও এ দিন মহুয়ার রোষের মুখে পড়তে হয়। কৃষ্ণনগর দক্ষিণে এ বার তৃণমূল প্রায় নয় হাজার ভোটে পিছিয়ে থেকেছে। বিশেষ করে কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের পঞ্চায়েতগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। এই কেন্দ্রেও নেতৃত্বের পরিবর্তন আসন্ন বলে জানিয়ে দেন মহুয়া। তবে দলকে প্রায় ৩১ হাজার ভোটে এগিয়ে থেকেও রোষের মুখে পড়তে হয় কালীগঞ্জের নেতৃত্বকে। এই এলাকায় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলে মহুয়ার হুঁশিয়ারি, যারা ভোট করেনি আর যারা সংখ্যালঘু এলাকায় বিজেপিকে ভোট না দিয়ে সিপিএমকে দিতে বলেছে তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হবে।