হল্ট স্টেশনের নেপথ্যের আন্দোলন নিয়ে পত্রিকা

টানা ৪৩ বছরের আন্দোলনের ফলে ১৯৭০ সালের ২২ অগস্ট তৈরি হয়েছিল কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার পীরতলা হল্ট স্টেশন। এই আন্দোলনের কারিগর যিনি তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা নন। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার দৌড় মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি অধুনা প্রয়াত সওদাগর সরকার। স্টেশন পেলেও আন্দোলন কিন্তু থেমে থাকেনি। সেই স্টেশনের উন্নয়নের জন্য আমৃত্যু লড়ে গিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০১:৪১
Share:

টানা ৪৩ বছরের আন্দোলনের ফলে ১৯৭০ সালের ২২ অগস্ট তৈরি হয়েছিল কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার পীরতলা হল্ট স্টেশন। এই আন্দোলনের কারিগর যিনি তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা নন। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার দৌড় মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি অধুনা প্রয়াত সওদাগর সরকার। স্টেশন পেলেও আন্দোলন কিন্তু থেমে থাকেনি। সেই স্টেশনের উন্নয়নের জন্য আমৃত্যু লড়ে গিয়েছেন তিনি। বয়সের কারণে তাঁকে গুরুভার থেকে অব্যাহতি দিতে আন্দোলেনের ‘ব্যাটন’ সওদাগরের হাত থেকে তুলে নেন তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি। এই উত্তরসূরিও রাজনৈতিক নেতা নন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বীরেন্দ্রকুমার মণ্ডল। দাবি মেনে পীরতলা হল্টের উন্নয়নের কাজ শুরু হওয়ায় এই পর্বের আন্দোলনের ছেদ ঘটে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। একটি হল্ট স্টেশেনের পত্তন ও তার উন্নয়নের জন্য গড়ে ওঠা টানা ৪৫ বছরের আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে গত ১৯ জুলাই প্রকাশিত ‘পীরতলা হল্ট রেল স্টেশন আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত’ নামের ওই গ্রন্থটিতে।

Advertisement

ওই হল্ট স্টেশন লাগোয়া ধুলাউড়ি হাইস্কুলে গত রবিবারের অনুষ্ঠানে বইটির আবরণ উন্মোচন করেন গল্পকার নীহারুল ইসলাম, রেলযাত্রী সমিতির সম্পাদক এআর খান এবং ওই হাইস্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান দুই প্রধান শিক্ষক— যথাক্রমে এহেসানুল হক ও এমদাদুল হক। গ্রন্থের লেখক স্বয়ং বীরেন্দ্রকুমার মণ্ডল। টানা ৪৫ বছরের আন্দোলনের আবেগে সিক্ত এলাকার লোকজন বই প্রকাশ অনুষ্ঠানেই ৬৫ কপি বই কেনেন। পীরতলার অবস্থান ভগবানগোলা ও কৃষ্ণপুর স্টেশনের মাঝখানে। গ্রন্থটি থেকে জানা যায়, আন্দোলেন জেরে ১৯৫৬ সালের ২০ জুলাই সওদাগর সরকারকে কারাবরণ করতে হয়। বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজনের যাতায়াতের জন্য হল্ট স্টেশনের প্রয়োজন অনুভব করে তিনি কেবল আন্দোলনই নন, চাকরির পদোন্নতি নেননি তিনি।

বীরেন্দ্রবাবু জানালেন, রেল দফতর হল্টের দাবি না মানায় ‘কর্মী বাহিনী’ গড়ে পীরতলার কাছে দিনের বেলায় লাল কাপড় ও রাতের বেলায় লালবাতি দেখিয়ে প্রতিটি ট্রেন থামানো হত। তাতেও না থামলে আগের স্টেশন থেকে ট্রেনে থাকা ‘কর্মী বাহিনী’র সদস্যরা চেন টানত। তখন বাধ্য হয়ে ট্রেন থামত। সাদা কাগজে ‘পীরতলা স্টেশন’ লেখা সিলছাপ মারা ১০ পয়সা দামের রেলের টিকিট চালু করেছিল ‘কর্মী বাহিনী’। তা নিয়ে ১৯৭০ সালের ২৭ ফেব্রয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘জনতা স্টেশন, জনতা টিকিট’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হলে রেল বিপাকে পড়ে। অবশেষে ওই বছর ২২ অগস্ট রেল কর্তৃপক্ষ ‘পীরতলা হল্ট’-এর উদ্বোধন করে। মাথার উপর ছাউনি না থাকা নীচু প্ল্যাটফর্মের দৈন্য দশা অবশেষে ঘুচেছে ২০০৯ সালে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement