প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের ফলাফলে এগিয়ে থাকল মুর্শিদাবাদ জেলা। এবং গত বছরের মতোই এ বারও পাশের নিরিখে মেয়েরা পিছনে ফেলে দিল ছেলেদের। রাজ্য জুড়ে কৃতীদের তালিকাতেও কন্যাদের দাপট। মুর্শিদাবাদও তার ব্যতিক্রম নয়।
মেধা তালিকায় প্রথম স্থান পেয়েছে জেলার জঙ্গিপুর মুনিরিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী নোশিফা খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭১। প্রথম দশে জেলার আরও চার পড়ুয়া রয়েছে। লালগোলা রহমতুল্লা হাই মাদ্রাসার পড়ুয়া শাহিদ আখতার ৭৬৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। ইসলামপুর থানার রানিনগর ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা রিকি আলি রাজ্যে চতুর্থ হয়েছে। রিকি রানিনগর এক নম্বর ব্লকের আমিরাবাদ হাই মাদ্রাসার পড়ুয়া। একই বিদ্যালয় থেকে সপ্তম হয়েছে সিমলা আখতার। সে আটশোর মধ্যে ৭৫৮ নম্বর পেয়েছে। অষ্টম হয়েছে ইসলামপুর থানার রামনগর হাই মাদ্রাসার পড়ুয়া সহেলি মল্লিক। প্রাপ্ত নম্বর ৭৫৬।
২০১৯ সালে জেলায় পাশের হার ছিল ৭৭.১৩ শতাংশ। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৮৭.৫৩ শতাংশ। চলতি বছরে জেলায় মোট ১৬,৬২৯ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তবে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৫১৪ জন ছাত্র এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১২,১১৫ জন। পাশের হারে, মোট পরীক্ষার্থীর ৮৭.০৫ শতাংশ ছাত্র এবং ৮৮.০১ শতাংশ ছাত্রী। ২০১৯ সালে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ১৪,৬৩৬ জন পড়ুয়া পরীক্ষা দিয়েছিল। যাদের মধ্যে ৪৩০৭ জন ছিল ছাত্র এবং ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১০৩২৯ জন। এ বছর ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও ছাত্রদের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সদস্য মহম্মদ আনসার আলির এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা, “মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে রুজির তাড়নায় ভিন রাজ্যে কাজে চলে যাচ্ছে বহু ছাত্র। অষ্ম থেকে দশম শ্রেণিতেই তারা পড়াশোনায় ইতি টেনে দিচ্ছে।
মোট পরীক্ষার্থী
১৬,৬২৯
ছাত্র ৪৫১৪
ছাত্রী ১২,১১৫
মোট পরীক্ষার্থীর ৮৭.০৫ শতাংশ ছাত্র ও ৮৮.০১ শতাংশ ছাত্রী পাশ করেছে।
মেধা তালিকায়
জেলার ৫
শুধু মাদ্রাসা বোর্ড নয়, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও একই ধারা দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষায় ছেলেদের সংখ্যা কমে যাওয়ার এটা একটা বড় কারণ। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েরা অবশ্য পড়াশোনার জন্য ঘর থেকে বেড়িয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। সংস্খার অনেকটাই কেটেছে। পাশাপাশি, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, শিক্ষাশ্রীর মতো সরকারি প্রকল্প অনেকটাই মেয়েদের এগিয়ে আসতে সাহায্য করেছে।” সেই সঙ্গে কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের দাপটে নাবাসিকা বিয়ে অনেকটাই রুখে দেওয়া গিয়েছে। ফলে শুধু ঘরে বসে না থেকে তাদের মধ্যে পড়াশোনার তাগিদ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের করোনা টিকা অক্টোবরেই? সেই চেষ্টাই চলছে, বলছেন বিজ্ঞানীরা
একই দিনে আলিম (মাধ্যমিক সমতূল্য) ও ফাজিল (উচ্চমাধ্যমিক সমতূল্য) পরীক্ষার ফলও প্রকাশিত হয়েছে। ওই দুই পরীক্ষাতেও পাশের হার গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। জেলার ১৮৬৪ জন পড়ুয়া আলিম পরীক্ষা দিয়েছিল। সেখানেও ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। মোট পরীক্ষার্থীর ৬৬৭ জন ছাত্র এবং ১১৭৭ জন ছাত্রী। তাদের পাশের হার ৮৮.৫৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে যা ছিল ৭৯.৮৫ শতাংশ। ফাজিল পরীক্ষা দিয়েছিল ৭৪০ জন। তাদের মধ্যে ৩১৭ জন ছাত্র এবং ৪২৩ জন ছাত্রী। পাশের হার ৮৯.৫৬ শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালে পাশের হার ছিল ৮৪.৮১ শতাংশ।
বিভিন্ন ব্লকের সফল পরীক্ষার্থীদের হাতে ব্লক আধিকারিকের মাধ্যমে এ দিন হাইমাদ্রাসা ও আলিম-ফাজিলের সফল পরীক্ষার্থীদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছা বার্তা পৌছে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামুরুদ্দিনের শুভেচ্ছা বার্তা পৌছে দেন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের আঞ্চলিক কর্মকর্তারা।
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে