বিয়ের কার্ডে দিনবদল
নাকের ডগায় নেমে এসেছে চশমাটা। মেঝেতে থেবড়ে বসে লাল কালিতে নিপুণ হাতে দিন বদলে দিচ্ছেন তিনি!
মিনুর বিয়ে পিছিয়ে গিয়েছে।
বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে। আয়োজনের কোনও মাপজোক ছিল না। দই ফুচকা থেকে পাঁঠার মাংস, পাবদার নাবাল ঝোল থেকে আম-খেজুরের চাটনি— কোনটা ছেড়ে বাদ পড়বে কে, তা নিয়ে পরিবারের অন্দরে একটা মৃদু ঠোকাঠুকি লেগেই ছিল। কিন্তু আচমকা ঝড়ের মতো আসা ভোট দিল সব ভেস্তে। ২৯ এপ্রিল উড়ে গেল ১৪ মে’তে।
এখন কার্ড বিলির আগে তাই লাল কালিতে দিন বদল করছেন পাত্রের বাবা, ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা! বলছেন, ‘‘বরাত তো সবই হয়ে গিয়েছিল। দই থেকে গাড়ি, ঢোল থেকে প্যান্ডেল। এখন পনেরো দিন পিছিয়ে গেলে, ডেকরেটরের পায়ে ধরতে হচ্ছে, মিষ্টির দোকানে গিয়ে হত্যে দিতে হচ্ছে, ‘বাবা দইটা প্রয়োজনে বাইরে থেকে আনান!’’ ভোটের ধাক্কায় এমন বিয়ে বদলে যাওয়ার ঘটনা কান্দির আশপাশে আকছার। তাঁদের কেউ দিন বদলের ফলে মেনু থেকে আমারে বদলে আনারসের শরণাপন্ন হয়েছেন কেউ বা ভাড়া করা বাসের বদলে নতুন করে বুক করেছেন খান তিনেক টাটা সুমো। ভোটের এমন তুমুল ধাক্কায় বিয়ে বদলে যাওয়ায় তাঁদের তেমন করণীয় কিছু নেই, তবু কেমন জড়োসড়ো যেন প্রার্থীরা। তবু কোথায় যেন একটা অস্বস্তি। কংগ্রেসের জাঁদরেল প্রার্থী যদি মিনমিন করে বলেন, ‘‘বড্ড খারাপ লাগছে জানেন তো, মানুষ কত দিন ধরে কত তোড়জোড় করেছেন...’’, তো তৃণমূলের নেতা বলে বসছেন, ‘‘দিন না পিছলেও তো চলত, আমরা না হয় সব ব্যবস্থা করে দিতাম!’’
যা শুনে জেলার এক বাম নেতা পুরনো ঢঙে বলছেন, ‘‘বিয়ে আগে না গণতন্ত্র, সব দিকটাই তো ভেবে দেখতে হবে!’’