তিনি নেই। আবার আছেনও।
তিনি প্রয়াত মন্ত্রী, তথা প্রদেশে কংগ্রেসের একদা সভাপতি আব্দুস সাত্তার। মুর্শিদাবাদ জেলায় ‘মিথ’ হয়ে থাকা প্রয়াত সেই মন্ত্রীর লম্বা ছায়ার সঙ্গে এ বার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে লড়তে হবে বিরোধীদের। ভোটযুদ্ধের সেই রণকৌশলের ফাঁদ পাতা হয়েছিল গত ১২ জানুয়ারি লালগোলার ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে। সেখানে জনসভায় প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী তাঁর বরাবরের চলন মেনে আগাম ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে লড়ার সুযোগ পেলে কংগ্রেসের প্রার্থী হবেন আবু হেনা।’’ সেই কথাতে গত ১৮ মার্চ সিলমোহর দিয়েছে কংগ্রেসের ‘কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটি’। এ বার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ‘সাত্তারের ব্যাটা’ আবু হেনা।
লালগোলার ছ’বারের বিধায়ক আবু হেনা মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতিও বটে। কিন্তু শতকরা ৭৩ ভাগ সংখ্যালঘু প্রভাবিত জেলায় আবু হেনা ওই পরিচয়ে ততটা পরিচিত নন। তিনি ‘সাত্তারের ব্যাটা’ বলেই সমধিক পরিচিত। আব্দুস সাত্তার ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। কংগ্রেস জামানার শেষ দু’বার তিনি মন্ত্রী ছিলেন। এক বার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও ছিলেন। বিরোধী দলনেতাও ছিলেন।
সাত্তারের মন্ত্রীত্ব কালে বাংলায় সবুজ বিপ্লব হয়। কৃষি মন্ত্রী সাত্তারের জেলা মুর্শিদাবাদও সেই সুফল ভোগ করে। সাত্তারের উদ্যোগে সারা রাজ্যের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার মাঠে মাঠে পোঁতা হয় ফসলে জলসেচের জন্য ‘ডিপ টিউব ওয়েল’। এক ফসলি জমি তিন ফসলিতে রূপান্তরিত হয়। এ জেলার আনাচে কানাচে আজও ‘মিথ’— ‘আব্দুস সাত্তারের আমলেই মুর্শিদাবাদের সব থেকে বেশি বেকারের চাকরি হয়েছে।’ সেই সুবাদে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে নয়, লালগোলার মানুষ তাঁকে ছ’ বারের বিধায়ক করেছেন ‘সাত্তারের ব্যাটা’ বলেই।
হাইকোর্টের আইনজীবী আবু হেনার নাম ছাপিয়ে আজও তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উপর দীর্ঘ আচ্ছাদন হয়ে আছে তাঁর বাবার কীর্তির ছায়া। যেমন, মালদহে আবু বরকত গনি খান চৌধুরী। পূর্বপুরুষের সেই কৃতকর্মের ছায়াকেই মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে অধীর চৌধুরীর হাতিয়ার করেছেন আবু হেনার জন্য। তবে হেনার নিজস্ব একটি অর্জনও ‘ব্যান্ড ভ্যালু’ হিসাবে ভোটবাজারে বরাবর
কাজ দেয়।
জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘গুড়জল, নকুলদানার মতো ভোট সংস্কৃতির ময়দানে আবু হেনা শান্ত, ধীরস্থির ও শান্তির ব্যতিক্রমী প্রতীক।’’
হেরোইন পাচারের আন্তর্জাতিক ‘করিডর’ লালগোলা থানায় কখনও স্বশরীরে যাওয়া তো বহু দূরের কথা, কোনও পাচরকারীর জন্য একটি ফোনও তিনি করেননি কখনও। পুলিশি রিপোর্ট বলছে
সে কথা।