টিভিতে কেন্দ্রের ঘোষণা শোনার পরেই অক্ষয় তৃতীয়ার সকাল থেকে ঝাঁপ তুলে ঝাড়পোঁছ চলে অনেক দোকানে। পরে অবশ্য পুলিশ এসে দোকান বন্ধ করে দেয়। রবিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুুদীপ ভট্টাচার্য
এক মাসের উপর চলা লকডাউনে তাঁরা এমনিতেই নাজেহাল। এরই মধ্যে টিভিতে কেন্দ্রীয় ঘোষণা শুনে রবিবার সকালে অনেকেই তড়িঘড়ি দোকান খুলে বসেছিলেন। কিন্তু পুলিশ গিয়ে সেগুলি বন্ধ করিয়ে দেয়। কারণ রাজ্য প্রশাসনের তরফে এখনও এ নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ নেই।
লকডাউনের ঘোষিত মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত। এরই মধ্যে মল, মদের দোকান, সেলুনের মতো কিছু ব্যতিক্রম বাদে বাকি সব দোকান খোলার ঘোষণা শুনে আশান্বিত হয়ে উঠেছিলেন বহু দোকানিই। কিন্তু কারা দোকান খুলতে পারবেন আর কারা পারবেন না তা নিয়ে দিনভর অজস্র প্রশ্ন ঘুরেছে। কেউ দোকানে অক্ষয় তৃতীয়ার পুজোর প্রস্তুতি নিয়েছেন, তো কেউ ছুটেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তাদের কাছে। কেউ আবার ছুটেছেন পুলিশ বা বিডিও-র কাছে।
নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েল অবশ্য বলেন, “আপাতত জেলায় লকডাউন যেমন চলেছে তেমনই চলবে। শুধু অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া কোন দোকান খুলবে না। কেন্দ্র বা রাজ্যের তরফে কোনও নির্দেশ এখনও আমাদের কাছে আসেনি। যদি পরে কোনও নির্দেশ আসে, সেই মতো ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।”
কিন্তু টিভিতে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কথা শুনেই এ দিন বহু দোকান খুলে দেওয়া হয়। গত কিছু দিন ওষুধ, মুদিখানা এবং মিষ্টির দোকান খোলা থাকলেও অধিকাংশ দোকান বন্ধই ছিল। এ দিন সকাল থেকে রানাঘাট, চাকদহ, শিমুরালি, মদনপুর, ধানতলা, কৃষ্ণনগরের মতো নানা জায়গায় কাপড়, জুতো, প্রসাধনীর দোকান খুলে যায়। লোকে ভিড়ও করেছে। রানাঘাট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা পিন্টু সরকার বলেন, “লোকজনকে দেখে মনে হচ্ছিল, তাদের মন থেকে ভয় মুছে গিয়েছে। দোকান খুললে ভিড় হবেই। ক্রেতা বা বিক্রেতাদের অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি।” পরে পুরসভাকর তরফে ওই সব দোকান বন্ধও করিয়ে দেওয়া হয়।
তেহট্টের বার্নিয়ায় শ্রীকৃষ্ণপুরে গ্রামে কিছু দিন আগে পাঁচ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান মেলে। ওই গ্রামটিকে ‘স্পর্শকাতর’ হিসেবে চিহ্নিতও করা হয়। তবে ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’-এ যে দোকান খোলা হবে না তা কেন্দ্রের ঘোষণাতেই বলা হয়েছে। তেহট্টের এক দোকানি বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোন দোকান খোলা যাবে, তা জানি না। তাই ভয়ে-ভয়ে দোকান খুলেই ফেলেছিলাম।”
তবে করিমপুরে দোকানিরা ছিলেন অনেকটাই সাবধানী। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাদে অন্য কোনও দোকান খোলেনি। করিমপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ বলেন, ‘‘এক মাসেরও বেশি ধরে লকডাউনের জেরে আর্থিক ক্ষতি হলেও করোনা সংক্রমণ রুখতে সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত দোকান খোলা ঠিক নয়।’’
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম সম্পাদক তারক দত্ত ও গোকুলবিহারী সাহা জানান, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্য সরকার নতুন কোনও ঘোষণা না করা পর্যন্ত লকডাউনের নিয়মকানুনই বজায় থাকবে। সব ব্যবসায়ীরকে সেই নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে।