মুরুটিয়ার ফুলবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন কাঁটাতার পেরিয়ে সীমান্ত স্তম্ভ। ছবি: অমিতাভ বিশ্বাস।
কোনও কারণে বাংলাদেশে উত্তেজনা তৈরি করলেই তার আঁচ এসে পড়ে এ-পারে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলিতে। বিশেষ করে যে সমস্ত এলাকায় এখনও কাঁটাতার দেওয়া হয়নি বা কাঁটাতারের ও-পারে বাংলাদেশের দিকে জমি রয়েছে, সেখানে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বরাবরই বাংলাদেশে কোনও রকম অস্থিরতা তৈরি হলে অত্যাচারিত মানুষজন যেমন এ-পারের আত্মীয়দের কাছে আশ্রয় চান, তেমনই রাতের অন্ধকারে ও-পারের দুষ্কৃতীদের হামলার আশঙ্কাও থাকে। এ বার সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের খবর আসতে শুরু হওয়া ইস্তক হামলার আশঙ্কা সীমান্তের বাসিন্দাদের মনে ফের চেপে বসছে। যদিও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) তৎপরতা বেড়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েক জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এখনও পর্যন্ত নদিয়া সীমান্তে তেমন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তা সত্ত্বেও সীমান্তের চাষিরা ভয়ে-ভয়ে কাঁটাতার পার হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জমিতে চাষ করতে যাচ্ছেন। আবার বাংলাদেশের চাষিরাও তাঁদের জমিতে চাষ করতে আসছেন। তবে আগের মত চিৎকার করে দুই দেশের চাষিদের মধ্যে কথাবার্তা বলা বন্ধ। পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে।
করিমপুরে সীমান্ত সংলগ্ন শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অনুপকুমার বিশ্বাস বলেন, "কিছু জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়নি। তবে সেখানকার চাষিরা কোনও সমস্যার কথা জানায়নি। এখনও পর্যন্ত ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না।” আবার বাউসমারি গ্রামের চাষি সঞ্জিত মণ্ডল বলছেন, “আমরা এখনও কোন সমস্যায় পড়িনি ঠিকই। তবে চাষ করতে গেলে গা ছমছম করছে।” একই ভাবে ভয়ের কথা বলছেন চাপড়ার হাটখোলা গ্রামে কাঁটাতারের ও-পারের বাসিন্দারা।
নদিয়া জেলায় প্রায় ২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত আছে যার ও-পারে বাংলাদেশ। তার মধ্যে এখনও প্রায় ২০.৬১১ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি। ওই এলাকা পুরো ফাঁকা। অথচ সেখানে জনবসতি আছে। আবার কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও কাঁটাতারের ও-পারের বাসিন্দারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকেন।
সেই সম্ভাবনার কথা মাথার রাখার পাশাপাশি অনুপ্রবেশ রুখতে সীমান্তে নজরদারি শুরু করেছে বিএসএফ। যে এলাকাগুলিতে কাঁটাতারের বেড়া নেই, সেখানে কয়েক মিটার অন্তর বিএসএফ জওয়ানদের পাহারায় থাকতে দেখা গিয়েছে। এ ছাড়াও বিএসএফের গাড়ি সীমান্ত রোড ধরে মাঝে-মধ্যেই টহল দিচ্ছে।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরুর সময় থেকেই সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে সীমান্ত ঘেঁষা শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, “বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরাও উদ্বেগে রয়েছি।”
গত রবিবার রাতে আবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ধানতলা থানার বহিরগাছি এলাকা থেকে তিন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা আত্মগোপন করে ছিল। একই ভাবে, হাঁসখালির বড় চুপরিয়া গ্রাম থেকে দু’জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে আরও অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।