ছবি: পিটিআই।
প্রবাস থেকে গ্রামে ফিরলেও এক চিলতে ঘরে স্থানসঙ্কুলান না হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিযায়ী শ্রমিকদের হোম কোয়রান্টিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিছক সোনার পাথরবাটি। গ্রামের মাচার আড্ডা থেকে স্থানীয় হাটবাজারে তাদের আকছার চলাচল কিংবা পাড়া-পড়শির সঙ্গে তাঁদের অবাধ মেলামেশায় কপালে ভাঁজ পড়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের। উদ্বেগ বাড়ছিল গ্রামীণ মানুষেরও। দিন পনেরোর ব্যবধানে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যাও ২ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭-এ। এই অবস্থায় হোম কোয়রান্টিন হিসেবে এ বার গ্রামের স্কুল বাড়িগুলিকে ব্যবহারের নির্দেশ দিল শিক্ষা দফতর। তবে তা নিছকই মৌখিক ভাবে, কখনও বা স্কুল পরিদর্শকের হোয়াটস্অ্যাপের নির্দেশের ভিত্তিতে।
দিন কয়েক আগেও বন্ধ স্কুলে কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়ার সুপারিশ দিয়ে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল জেলা প্রশাসনকে। প্রথম বাধাটা এসেছিল অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে। তাঁদের যুক্তি ছিল— আজ না হোক কাল স্কুল খুলবে। কোয়রান্টিন কেন্দ্র হওয়া সেই সব স্কুলে কোনও ভাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটলে তার দায় বর্তাবে স্কুল কর্তৃপক্ষের উপরে। তাই প্রথম থেকেই বেঁকে বসেছিলেন বেশ কিছু স্কুলের পরিচালন সমিতির কর্তাব্যক্তিরা।
কিন্তু জেলায় করোনার ছায়া লম্বা হতে থাকায় বিশেষ কোভিড হাসপাতালে আর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না। দাবি উঠছিল, গ্রামের কাছাকাছি কোয়রান্টিন কেন্দ্র খোলার। তার জেরেই স্কুলগুলিকে কোয়রান্টিন কেন্দ্র করার ছাড়পত্র দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে। পরোক্ষে সরকারি সিলমোহর পড়ে যাওয়ায় শাসক দলের নেতারাও এখন গ্রামীণ মানুষের মন পেতে স্কুলেই কোয়রান্টিন কেন্দ্র খোলার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে বলে বিরোধীদের দাবি। জেলা তৃণমুল সভাপতি আবু তাহের খান বলছেন, ‘‘প্রতি দিন শয়ে শয়ে পরিযায়ী শ্রমিক ঘরে ফিরছেন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও। অধিকাংশ শ্রমিকের হোম কোয়ারান্টিনে থাকার মতো অবস্থা নেই। ফলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জেলার ২৫০ পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে স্কুল বাড়িকে বেছে নেওয়া হয়েছে। দলের তরফেই তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’ এ বার সেই উদ্যোগে সিলমোহর দিয়ে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘স্কুলভবন ও মাদ্রাসাগুলিতে কোয়রান্টিন কেন্দ্র করার নির্দেশ এসেছে। সেই মতো আমরা অনুমতি দিয়েছি।’’
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, জেলায় ২১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন এবং ৬২টি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনে ইতিমধ্যেই কোয়রান্টিন কেন্দ্র চালু হয়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল বলেন, ‘‘ভিন রাজ্য থেকে ফেরা মানুষের কথা ভেবে স্কুলে কোয়রান্টিন কেন্দ্র খোলার কথা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’