অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মভিটের শেষ স্মৃতিটুকু। পরিণত হয়েছে নেশার ঠেকে। এই স্মৃতিরক্ষায় যাঁদের এগিয়ে আসার কথা ছিল, তাঁরা কেউ এগোননি। ফলে অনেকেরই আশঙ্কা এ ভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে এই চিহ্নটুকুও হারিয়ে যাবে।
গোটা বিষয়টা সামনে আসার পরে শহরের মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কবি থেকে নাট্যকার, সঙ্গীতশিল্পী থেকে শিক্ষক— সকলেই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মভিটের শেষ অংশটুকু রক্ষার বিষয়ে সরব হয়েছেন। সকলেই দাবি তুলছেন যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে কবি-স্মৃতির অবশিষ্টাংশ সংস্কার করে তা রক্ষা করার ব্যবস্থা হোক।
কৃষ্ণনগর শহরের রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ছিল কবির জন্মভিটে। সেই ভিটের আজ আর কোনও অস্তিত্ব নেই। সেখানে গড়ে ওঠেছে লজ, দোকান, বাজার। রেল লাইনের এক পাশে কোনও ক্রমে টিকে আছে সেই জন্মভিটের তোরণ। পাঁচিল ভাঙা সে জায়গায় ডাঁই হয়ে এত দিন জমে থাকত আবর্জনা। নেশার ঠেক বসায় সেখানে ইতস্তত পড়ে থাকে মদের বোতল, গাঁজার কল্কে। অবস্থা জেলে নিজে থেকেই কবির শেষ স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় এগিয়ে আসে ফেসবুকের একটি গ্রুপের সদস্যেরা।
সোমবার সে খবর আনন্দবাজারে প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছে শহরের নাগরিক সমাজ।
বিশিষ্ট কবি দেবদাস আচার্য বলছেন, “দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আমাদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার মানুষ। অথচ, তাঁর জন্মভিটের স্মৃতির শেষ অংশের এই করুণ অবস্থা আমাদের কাছে দারুণ লজ্জার ব্যাপার। জন্মভিটের তোরণ সাক্ষীগোপালের মতো কোনও মতে দাঁড়িয়ে আছে আবর্জনার মধ্যে। একজন কৃষ্ণনাগরিক হিসাবে এ বড়ই যন্ত্রণার।” তাঁর মতে, দায় এড়ানোর ঠেলাঠেলি থেকে সরে এসে এ কাজে নাগরিক সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। অন্য কারও উপরে ভরসা না করে কবির স্মৃতিচিহ্নটুকু রক্ষার কাজে নিজেদের হাত লাগানোর সময় এসেছে।
প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শহরের বর্ষীয়ান নাট্যকার তুহিন দত্ত। তিনি বলছেন, “একটা স্মৃতিরক্ষা কমিটি আছে। কিন্তু সারা বছরে এক বার মাল্যদান করা ছাড়া তাদের কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পাই না। ওরাও কাউকে ডাকেও না যে আমরা এগিয়ে গিয়ে কিছু করব।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করে সংরক্ষণের কাজ করব। তাতেও সাড়া মেলেনি। এ বার আমরা নিজেদের মতো করেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
শহরের পরিচিত সঙ্গীতশিল্পী সুস্মিতা দত্ত বলছেন, “বাইরে যখন আমাদের শহরের কবির গান গাই, তখন দেখি সকলে কেমন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ভীষণ গর্ব হয়! কিন্তু আবার যখন এই শহরে ফিরে দেখি যে কবির জন্মস্থানেই তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, তখন ততটাই কষ্ট হয়।’’
শেষে তিনি ওই ফেসবুক গ্রুপের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি, যাঁরা নিজ উদ্যোগে রবিবার এই এলাকায় পাঁচিল তোলার কাজে হাত লাগিয়েছেন। নিজস্ব চিত্র