Land and Land Reform Department

কায়েমি স্বার্থেই কি বিএলএলআরও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ?

তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, কালীগঞ্জ বিএলএলআরও অফিসে দালালদের মদতে সরকারি জমি অন্যের নামে রেকর্ড হচ্ছে।

Advertisement

সন্দীপ পাল

কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২৯
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কালীগঞ্জ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে ব্লক ও জেলা স্তরে। বিধায়কের দফতরেও সেই অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ওই দফতরের আধিকারিক কিছু লোকের কায়েমি স্বার্থে আঘাত করাতেই মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।

Advertisement

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, খোদ আধিকারিকের (বিএলএলআরও) মদতেই ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে দালালরাজ চলছে। সরকারি জমি অন্যের নামে রেকর্ড করা, ‘কৃষক বন্ধু’-র জন্য মিউটেশন করতে এসে হয়রান হতে হচ্ছে। জাল দলিল দেখালেই জমির মালিকানা বদলে যাচ্ছে।

কালীগঞ্জের বাসিন্দাদের একাংশ একত্রিত হয়ে এই অভিযোগপত্র জমা করেছেন। তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, কালীগঞ্জ বিএলএলআরও অফিসে দালালদের মদতে সরকারি জমি অন্যের নামে রেকর্ড হচ্ছে। ওয়ারিশ ফাঁকি দিয়ে বহু জমি অন্যের নামে করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি জাল দলিলের মাধ্যমেও বদলে যাচ্ছে জমির রেকর্ড। শুধু তা-ই নয়, কালীগঞ্জের বল্লভপাড়া ও মাটিয়ারি থেকে যে বালি তোলা হয় তার সঙ্গেও ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরের যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

Advertisement

অভিযোগকারীদের অন্যতম কালীগঞ্জের বাসুদেব ঘোষ বলেন, “আমার স্ত্রী লক্ষ্মী ঘোষের নামে ২০ শতক জমি ছিল। তিনি মারা গিয়েছেন। ওই জমি চার জনের মধ্যে ভাগ হওয়ার কথা।” তাঁর অভিযোগ, “আমার দুই ছেলে কোনও কারণে তাদের অংশের মিউটেশন করিয়ে নেয়। আমি খবর পেয়ে ওই অফিসে বলে এসেছিলাম যাতে জমিটা আমাকে না জানিয়ে রেকর্ড করা না হয়। ওরা তখন বলেছিল, হবে না। কিন্তু পরে সেই জমি টাকা নিয়ে ওদের দুই ভাইয়ের নামে রেকর্ড করে দেয়। আজ দু’মাস হল ঘুরছি।’

কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের অন্য একটি অংশ আবার অন্য এক দিকে ইঙ্গিত করছে। তাঁদের দাবি: ঘটনাচক্রে, কালীগঞ্জ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের বর্তমান আধিকারিক বাবলু বিশ্বাস এই পদে যোগদানের পরেই বর্তমান বিডিও-র নেতৃত্বে ওই দফতরের দালালরাজ কমাতে উঠে-পড়ে লাগেন। প্রথমেই তিনি লাইসেন্স ছাড়া মুহুরিদের দফতর চত্বরের বাইরে বার করে দেন। দফতর সূত্রের হিসাব বলছে, গত এক বছরে কালীগঞ্জ ব্লকে বালি ও মাটির গাড়ি ধরে প্রায় ২১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একাধিক পুকুর ভরাটের কাজ বন্ধ করে আইনি পদক্ষেপ করার কাজও হয়েছে।

ভূমি সংস্কার সূত্রে জানা যাচ্ছে, কালীগঞ্জ ব্লকে ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানে প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ হাজার মিউটেশন হয়। বর্তমানে মিউটেশনের চার হাজার আবেদন পড়ে আছে। সেগুলির বয়স খুব বেশি হলে ২০-২৫ দিন। সেগুলির কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশের দাবি, দফতর দলিলের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারে না। বহু জমি যা এতদিন সরকারের খাতায় মিউটেশন হয়নি, সেগুলি করার কাজ চলছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই তা হয়ে যাবে। আর তা ছাড়া এক নম্বর খতিয়ানে উঠে যাওয়া জমি ব্লক থেকে কাটা-ছেঁড়া করা যায় না। এই সব কারণেই অনেকের ‘সমস্যা’ হচ্ছে।

কালীগঞ্জের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বাবলু বিশ্বাসের দাবি, “যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মাটি ও বালি কাটার ক্ষেত্রে ভূমি দফতরের কেউ জড়িত নয়।” কালীগঞ্জের বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি।” কালীগঞ্জের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, “ইতিমধ্যে তিন প্রতিনিধির কমিটিতে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুরো বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গেও কথা হয়েছে। দালাল চক্রের বিষয়টি ওঁরাও দেখছেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement