পালাবদলের পরে একে একে হারিয়েছিল বিধানসভা আসন। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত পুরসভা— নদিয়ায় বামেদের দখলে এখন টিমটিম করে জ্বলছে তাহেরপুর পুরসভা আর খান কয়েক পঞ্চায়েত।
সেই তালিকায় সোমবার সংযোজন ঘটল একটি সমবায় সমিতির। উল্লেখ করার মতো ঘটনা এটিই যে— পুজোর আগেই কৃষ্ণনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতার হাত বদল হলেও এলাকার সমবায়টি ফের দখল করেছে সিপিএম। ওই সমিতির ছ’টি আসনেই জিতেছে বামেরা।
মাস খানেক আগে সিংহাটি থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সহেলি বিবি দল ছেড়ে পা বাড়িয়েছিলেন তৃণমূলে। তা সত্ত্বেও ওই সমবায়ে সিপিএমের রমরমা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন দলের জেলা নেতারাও। তাঁদেরই এক জন বলছেন, ‘‘মানুষ য়ে এখনও আমাদের পাশে আছে এটা দেখেই বুকে বল পাচ্ছি!’’
দলের জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাসের দাবি, “জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি দখল করা যায়। কিন্তু যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন তাঁরা তো মন পাল্টাননি। এটাই ভরসার। এই সমবায় নির্বাচন সেটাই প্রমাণ করল।’’
১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই সমবায়ে জন্মাবধি ক্ষমতায় ছিল বামেরা। এলাকার বাম আন্দোলনের অন্যতম মুখ নওসাদ শেখ দীর্ঘদিন ধরে সমিতির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। নওসাদের ভাই জালাল শেখ ২০০৩ সালে সিপিএমের টিকিটে জিতে প্রধানও হন। সদ্য দলত্যাগী সহেলি বিবি সেই জালালের স্ত্রী। রাজনৈতিক ভাবে গ্রামে প্রভাবশালী এমন একটি পরিবারের শাসকদলের যোগদান তাৎপর্যপূর্ণ।
ব্লক তৃণমূল নেতাদের আশা ছিল, মানুষের মন বদলে গেছে, রাজনৈতিক সমীকরনও এ বার বদলে যাবে। তবে, তা যে হয়নি এ দিন ফল বেরোলে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ওই সমবায়ের পরিচালন সমিতির ছ’টি আসনই ছিনিয়ে নিয়েছে বামেরা। ওই সমবায়ে ভোটার সংখ্যা ছিল ৮৩৬। সিংহভাগ ভোটারই বাম মনোনীত প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। তৃণমূলের একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন ১৩১টি।
এলাকার আদি তৃণমূল নেতাদের দাবি, সিপিএম রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিতি নওসাদ শেখের আত্মীয়-স্বজনেরাই সমিতির সিংহভাগ ভোটার। অবশ্য এ কথা আড়ালে-আবডালে গ্রামের সাধারণ মানুষও স্বীকার করছেন। গ্রামেরই এক যুবক বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে নওসাদ ওই সমিতির ম্যানেজার। তিনি নিজেদের লোকজনের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি এখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে নিজের লোকেরাই ভোট দিলেন না তাঁকে।’’
এমনটা কেন হল? নওসাদও মেনে নিচ্ছেন, ‘‘সমবায়ে ভাল কাজ হয়েছে। সিপিএমের আমলেই। তাই মানুষ স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সিপিএমকেই বেছে নিল।’’
এই হারের পর পুরনো তৃণমূল আর অন্য দল থেকে আসা ‘নব্যতৃণমূল’ সদস্যদের দ্বন্দ্বও সামনে এসে পড়ল। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা জানান, তাঁরা নওসাদ ও সহেলিদের দলে নিতে চাননি। বিরোধীতা করে ব্লক ও জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। স্পষ্টই বলছেন, ‘‘ওঁরা অন্তরে সিপিএম, ভোটে তলায় তলায় সিপিএমের হয়েই কাজ করেছে।’’
কৃষ্ণনগর ২ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শিবশঙ্কর দত্ত বলেন, “ওই সমবায়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। ফলে ওরা কায়দা করে নিজেদের লোকজনকে ভোটার করেছিল। তাই ওরা জিতল।’’