ফাইল চিত্র।
অতি বৃদ্ধ এবং অথর্ব কয়েক জন মানুষকে বাদ দিলে এমন কেউ নেই যিনি রবিবার বিকেল থেকে স্কুল মাঠে এসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেননি। শুধু এই রঘুনাথপুর গ্রাম নয়, তার আশপাশের ১০-১৫ কিলোমিটারের মধ্যে যত গ্রাম রয়েছে সেখান থেকে যুবক-যুবতীরা সাইকেল-মোটরবাইক চালিয়ে হাজির হয়েছিলেন নিমতলা বিদ্যানিকেতন স্কুলমাঠে। তেহট্টের বীর শহীদকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
বৃহস্পতিবার উত্তর কাশ্মীরের বারামুলার উরি সেক্টরে পাক সেনার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে নদিয়ার তেহট্টের রঘুনাথপুরের ছেলে, সেনাকর্মী সুবোধ ঘোষ। খবর এসেছিল শুক্রবার। গোটা গ্রাম এখনও শোকস্তব্ধ। নিহত জওয়ানের দেহ রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে বর্ধমানের পানাগড়ে অর্জন সিংহ বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের কমিশনার সুকেশকুমার জৈন। বিকেল ৫টা ১ মিনিট নাগাদ সেনাবাহিনীর বিশেষ গাড়ি মৃতদেহ নিয়ে নদিয়ার তেহট্টে রওনা দেয়।
সুবোধের মৃত্যুর খবরে কালীপুজোর যাবতীয় আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছিল গ্রামে। প্রদীপ জ্বলেনি প্রায় কারও বাড়ি। গ্রামে পুজো হয়েছে কোনওমতে। স্কুলমাঠে সুবোধকে ‘গান স্যালুট’ দেওয়া হবে শুনে রবিবার বিকেল থেকে শেখানেই কয়েক শো মানুষ ভিড় করেন। যত রাত বাড়ে ভিড় তত বাড়তে থাকে।
আজ সোমবার ভাইফোঁটা। সুবোধ সেনাবাহিনীর চাকরির জন্য বাইরে-বাইরে থাকায় দীর্ঘ চার বছর ভাইফোঁটায় আসতে পারেননি। ফোঁটা দেওয়া হয়নি বোন পলির। ছ’ বছর আগে বিনোদনগরে তাঁর বিয়ে হয়। শুক্রবার পাকসেনার গুলিতে সুবোধের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে রঘুনাথপুর গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন পলি। এত বছর পর ভাইফোঁটায় বাড়ি ফিরেছেন তাঁর ভাই, কিন্তু সাড়হীন দেহ নিয়ে। ফোঁটা দেওয়া আর হল না তাঁর।